খুলনা

ঝিনাইদহে মানুষ শুন্য গ্রামে ৮০ বছর পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে জনবসতি

  প্রতিনিধি ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ৪:২৯:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মোমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

গ্রামের নাম মঙ্গলপুর। কাগজে গ্রামটির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্ততে এখানে কোন বসতি ছিলনা। তবে সেখানে থাকা পুকুর রাস্তাসহ কয়েকটি বাড়ির সামান্য ধ্বংসাবশেষ দেখে অনুমান করা যায় এখানে এক সময় জনবসতি ছিল। সেখানে এখন ফসলের চাষ হয়। বহুকাল ধরেই চলছে এমন অবস্থা। প্রায় ৮০ বছর পর সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে মঙ্গলপুর গ্রামে মানুষের বসতি শুরু হতে যাচ্ছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে গ্রামটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে ওই গ্রামে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। মাসখানেকের মধ্যে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পাশের বাগডাঙ্গা, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া গ্রামের সাতটি ভূমিহীন পরিবারকে এই ঘর দেওয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ বছর আগে “মঙ্গলপুর” নামের এই গ্রামের মানুষের মধ্যে অমঙ্গল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কলেরা বা গুটি বসন্তের মত মহামারি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে অনেকে মারা যায়। এসময় প্রাণে বাঁচতে সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকে গ্রামটি মানুষ শুন্য হয়ে পড়ে। গ্রামটির অবস্থান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এলাঙ্গী ইউনিয়নে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস বলছে, মঙ্গলপুর গ্রামটি ৬৬ নম্বর মঙ্গলপুর মৌজায় অবস্থিত। এই মৌজায় একটিই গ্রাম রয়েছে যার নাম মঙ্গলপুর। গ্রামে ২০৬টি খতিয়ানভুক্ত জমি আছে কিন্তু সেখানে কোনো পরিবারের বসবাস নেই।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা জানান, মঙ্গলপুর গ্রামে সাতটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। এটা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীন এক ব্যক্তি মোশারফ হোসেন জানান, ৭০ থেকে ৮০ বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামে মহামারি আকারে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ মারা যায়। এ আতংকে গ্রামের মানুষ আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। তবে তারা আর ফিরে আসে না। আর কিছু পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পাশ^বর্তী দেশ ভারতে চলে যান।

পার্শ্ববর্তী পাশপাতিলা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, আমরা লোকমুখে শুনে আসছি এ গ্রামে এক সময় মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু মহামারি আতঙ্কে গ্রামের সবাই পালিয়ে যায়। সেই থেকে মঙ্গলপুর গ্রামকে সবাই অমঙ্গলপুর বলে জানে। তবে সরকারের বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামের ভূমিহীন কিছু মানষের বসবাসের ব্যবস্থা হচ্ছে এটা ভালো। সরকারের চেষ্টায় অমঙ্গলপুরে মঙ্গলের হাওয়ায় অজানা আতঙ্ক কেটে যাবে বলে যোগ করেন এই বাসিন্দা।

 

বলাবাড়িয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল। গ্রামে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারন করে তখন অনেক মানুষ মারা যায়। ওই সময় গ্রামে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের খাল-বিল, পুকুর-কুয়ার পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে সবাইকে মরতে হবে। এই প্রচারের পর গ্রামের মানুষ দল বেধে ভারতে চলে যায়। কিছু মানুষ পাশের গ্রামগুলোতে চলে গিয়েছিল, যারাও পরে অন্যত্র চলে যায়। তিনি আরো জানান, সর্বশেষ নেটে ঠাকুর নামের একজন মঙ্গলপুরে থাকতেন, তিনি পরবর্তীতে খুন হলে গ্রামটি সম্পূর্ণ ভাবে মানুষশুন্য হয়ে পড়ে।

এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মঙ্গলপুর। কিন্তু এই গ্রামে মানুষ বসবাস করে না। তিনি লোকমুখে শুনেছেন, বহুবছর আগে অজানা আতঙ্কে মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। গ্রামটির কথা বর্তমান প্রজন্ম কিছুই জানেনা। সাতটি পরিবার ওই গ্রামে বসবাস শুরু করবে। আস্তে আস্তে গ্রামে আরও বসতি গড়ে উঠবে প্রত্যাশা করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by