দেশজুড়ে

নোবিপ্রবির বিএমএস বিভাগের ডিগ্রি সংকট সমাধানে শিক্ষকদের একাংশের অনীহা

  প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২৩ , ৬:১২:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নোবিপ্রবির বিএমএস বিভাগের ডিগ্রি সংকট সমাধানে অনীহা

বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে ডিগ্রি পরিবর্তনের দাবিতে টানা ১৭২ দিন ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে থেকেও এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু সমাধান পায়নি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ (বিএমএস) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

চলতি বছরের ২১ মে বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অথবা ইতিহাস বিভাগে ডিগ্রি পরিবর্তনের দাবিতে সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রায় ছয় মাস সময় অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে ডিগ্রি সংকটের বিষয়ে কোন সমাধান এনে দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এ সময় বিভাগের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত  ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকারের স্বাক্ষরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সমস্যা সমাধানে একটি নতুন করে ইউজিসির সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে কমিশনের নিকট প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ইউজিসির পরামর্শ মোতাবেক গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে বিএমএস বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ডিগ্রি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। 

একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত  ইউজিসিতে প্রেরণ করার পর প্রায় দুই মাস সময় অতিবাহিত হলেও সংকট নিরসনে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি ইউজিসি। যার নেপথ্যে কাজ করছে বিভাগের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও শিক্ষকদের একাংশের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে ইউজিসিতে ভিন্ন মত প্রকাশ করা।

এদিকে দীর্ঘ ছয় মাসেও ডিগ্রি পরিবর্তনের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিভাগের ছয়টি ব্যাচের মোট ২৩৯ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস – পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজমান রয়েছে।

এ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা জান্নাত রিন্তি বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের মূলত দুইটা অংশ।  একটা অংশ হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান আরেকটি অংশ হলো ইতিহাস বিভাগের। আমাদের বিভাগের ডিগ্রি পরিবর্তন আন্দোলনের শুরু থেকে আমাদের বিভাগের সকল শিক্ষকদের আন্দোলনের সপক্ষে সম্মতি ছিলো। ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেকোনো বিভাগে ডিগ্রি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে বিভাগের সকল শিক্ষকরা মেনে নিবেন বলে সম্মতি জানান। আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের কোন সমস্যা না থাকাই আমরা আমাদের বিভাগের ডিগ্রি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পরিবর্তন করার দাবি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউজিসিতে প্রেরণ করলে বিভাগের ইতিহাস কোরামের শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে বিরোধিতা শুরু করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের সিনিয়ররা ২০১৮ সালে একই দাবীতে আন্দোলন করলেও বিভাগের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ আধিপত্য টিকিয়ে রাখার রাজনীতির শিকার হয়েছে এবং আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। বিভাগে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা না ভেবে একক ভাবে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে। ইউজিসিতে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ায় সেটা আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট। যার ফলে আমাদের ডিগ্রি পরিবর্তনের বিষয়টি আরও জটিল হয়ে গিয়েছে । আমরা শুধুমাত্র একটা পরীক্ষার জন্য চাকুরীতে আবেদন করতে পারছি না। আমাদের অন্যান্য বিভাগের ব্যাচমেটরা পাশ করে চাকুরির বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিব্যদ্যুতি সরকার বলেন, বিভাগে দুই বিষয়ের শিক্ষক থাকায় বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে। আসলে সবাই নিজের সিদ্ধান্ত উপরে রাখতে চায়। বিভাগের এই বিপর্যয়ে এবং দলাদলিতে আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এই অবস্থায় আমি আর বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকতে চাইনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন,  আমরা বিএমএস বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলে বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ডিগ্রি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত ইউজিসিতে প্রেরণ করেছি। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই বিভাগের ব্যাপারে ইউজিসি থেকে সিদ্ধান্ত আসার কথা থাকলেও বিভাগের  শিক্ষকদের মধ্যকার জটিলতার কারনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।  আশাকরি অতিশীঘ্রই ইউজিসি ডিগ্রির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে এবং আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা অতিদ্রুত চালু করতে পারবো।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, এই বিষয়টি আমরা দ্রুত সমাধান করার জন্য চেষ্টা করলেও বিভাগের শিক্ষকদের একাংশের ভিন্নমত পোষণ করার কারণে ইউজিসি থেকে সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপণ হয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানের বিষয়ে দ্রুত  সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে জানিয়ে দিবো।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by