বাংলাদেশ

পাসপোর্ট সেবায় ‘বৈধতা’ পেতে যাচ্ছে দালালরা

  প্রতিনিধি ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ৪:৪৬:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

পাসপোর্ট করতে অনেকে ঝুটঝামেলা নিজেদের কাঁধে নিতে চান না, তাদের জন্য দালালের প্রয়োজনীয়তা কম নয়। আবার পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্যে অনেক সেবাগ্রহীতা অতিষ্ঠ হন। 

দালালরা পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে তাদের যোগাযোগের বরাতে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। আর তা করার জন্য তারা বাড়তি অর্থ দাবি করেন। অনেক সময় দাবি করা অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
>
আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে যেসব দালাল নিয়মিত তৎপর থাকেন, তাদের একজন শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট করতে সরকারি খরচ ৪ হাজার ২৫ টাকা। কিন্তু আমারে দিতে অইব ১০ হাজার টাকা।’

এত বেশি কেন, জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, ‘আপনার ফিঙ্গার ছবি, বই থেকে আরম্ভ করে সবকিছু আমি ক্লিয়ার করে দেব। পুরো ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আমি থাকব। আপনি আবেদন করলে আপনাকে তিন মাস ব্যাক ডেটে (পেছনের তারিখ) দিয়ে দিব। ধরেন, জুলাই মাসের পর তারিখ দেবে। আপনার তো এত লেট করা সম্ভব না। আমার চ্যানেল আছে, তার মাধ্যমে ২১ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বই (পাসপোর্ট) পেয়ে যাবেন।’

এসব অনিয়মকে নিয়মের আওতায় আনতে পাসপোর্ট অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা দালালদের বৈধতা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। দালালের উৎপাত কমানো এবং সাধারণ মানুষের সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে এবার দালালদের ‘পাসপোর্ট এজেন্ট’ হিসেবে বৈধতা দিতে যাচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

সেবাপ্রত্যাশীরা ঘরে বসেই এজেন্টের মাধ্যমে নিজের পাসপোর্ট করাতে পারবেন। আর যারা এজেন্টের সহযোগিতা ছাড়া নিজ উদ্যোগে পাসপোর্ট করাতে চান, তারাও কোনো রকম উৎপাতের শিকার হবেন না।

পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু বলেন, ‘এজেন্ট নিয়োগের বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। এটা বিশ্লেষণের দরকার আছে। চিঠির মাধ্যমে আমরা আমাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছি। এ-সংক্রান্ত খসড়াও জমা দিয়েছি।’

সরকার নির্ধারিত পাসপোর্ট ফির সাথে এজেন্ট খরচ কত নেয়া হবে, সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। চূড়ান্ত হয়নি কতজন দালালকে বৈধতা দিয়ে ‘এজেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন।

এ বছরের শেষ নাগাদ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।

মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টায় কাজ চলছে। এখানে অনেক বিষয় আছে। এজেন্টের ক্যাটাগরি, নীতিমালা এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে, কী ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে, কারণ হুট করে দিলে পরে কোনো বড় ধরনের সমস্যা ক্রিয়েট হলে তো হবে না।’

কতজনকে এজেন্ট হিসেবে বৈধতা দেয়া হবে, জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তিনি বলেন, ‘ক্রাইটেরিয়াতে যে পড়বে তাকেই দেয়া হবে। কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকবে না।’

এজেন্ট হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার পরিচিতি নম্বর থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফর্মের এক জায়গায় এজেন্টের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর থাকবে। পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালকের কাছে তার পূর্ণ পরিচয় থাকবে। কারণ এজেন্ট যদি উল্টাপাল্টা করে কোনো সেবাগ্রহীতার সাথে, সে ক্ষেত্রে তাকে ধরা যাবে৷’

দালালদের উৎপাত ও সেবাগ্রহীতাদের সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হন, ভোগান্তিতে না পড়েন, সেটা দেখা হবে। আপনি নিজে পারছেন না, অন্যের সহযোগিতা নেবেন।’

এজেন্ট নিয়োগ না দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে লোকবল বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যেত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে লোকবল চাইলেই কি বাড়ানো যায়? পাসপোর্ট অফিসে কি ঘুষ খাওয়ার জন্য লোকবল দেবে? যারে অফিসে নিয়োগ দিলেন, তারেই ৫৯ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন যা খুশি করার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে পদ্ধতি করতে যাচ্ছি সেখানে ঘরে বসে সেবা পাবেন সেবাপ্রত্যাশীরা।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by