রংপুর

প্রজনন মৌসুমে দেশি মাছ শিকারে কমছে উৎপাদন

  প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২১ , ৭:৪৫:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :

বর্ষার শুরুতে নতুন পানি দেশি মাছের প্রজননের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। এ সময় নতুন পানিতে ভেসে আসা পোনা ও ডিমওয়ালা মা মাছ নিধনের কারণে লালমনিরহাটে কমছে দেশি মাছে উৎপাদন। জানা গেছে, আষাঢ়-শ্রাবন মাসে নতুন পানিতে থই থই করে গ্রামের সব পুকুর-ডোবা, খাল-বিল ও নদী-নালা। এ সময় সামান্য পানিতেও ভেসে আসে পোনা আর ডিমওয়ালা মাছ। আর এসব মাছ শিকারে মেতে উঠে পেশাদার জেলেসহ মৌসুমী জেলেরা। ঝাঁকে-ঝাঁকে ধরা পড়ে দেশি ডিমওয়ালা মাছ। হাট-বাজার, বিলের ধার, নদীর পাড় ও রাস্তার ধারেও প্রকাশ্যে বিক্রি হয় এসব পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ। যদিও পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয় আইনত অপরাধ। কিন্তু তা আইনের খাতায় ফাইল বন্দিই থাকে। বাস্তবে প্রয়োগ হয় না।
বছর ঘুরে মৎস্য সপ্তাহে খাতার শূন্যস্থান পূরণে মৎস্য বিভাগ এক-দুইটা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দায়িত্ব শেষ করে বলে অভিযোগ স্থানীয় সুশিল সমাজের। তাদের দাবি— প্রজনন মৌসুমের দু’মাস না হলেও অন্তত এক মাস দেশি মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে দেশি মাছে ভরে উঠবে পুরো দেশ। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। প্রজনন মৌসুমে সাগরে ইলিশ শিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় বর্তমানে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। প্রয়োজনে জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে হলেও বাস্তবায়ন চান সুশিল সমাজ।

স্থানীয় জেলেরা জানান, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চোপড়া, টাকি, শোল, বোয়াল, টিংড়ি, মাগুর, শিং, কৈ, টেংরা, চেলা, পাবদা, ফলি ও বাইম মাছসহ নানান জাতের দেশি মাছে ভরপুর ছিল তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর জেলা লালমনিরহাট। এছাড়াও অসংখ্য ছোট নালার এ জেলায় মাছের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন প্রায় আট-দশ হাজার মেট্রিক টন কম। দেশের বাজারে এসব দেশি মাছের চাহিদাও প্রচুর। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেকেই এসব মাছের স্বাদ নিতেও পারেন না। প্রজনন মৌসুমে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ না করা এবং আগের মতো উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় এসব মাছে সংকট দেখা দিয়েছে। আবার কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে বসেছে।

এক একটি মা মাছ থেকে ২০-২৫ হাজার পোনা পাওয়া সম্ভব। এসব পোনা মাছ বড় হওয়ার সুযোগ দিলে দেশি মাছের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। দেশে এসব মাছের চাহিদা বেশি থাকায় ও পেটের দায়ে জেলেরা ডিমওয়া বা পোনা মাছ ধরে বিক্রি করছেন। সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রণোদনা দিলে এক মাস তারা দেশি মাছ ধরা বন্ধ করতেও রাজি রয়েছেন। তবুও তারা চান আগের মতোই এসব মাছে দেশ ভরে উঠুক।

পোনা মাছ নিধনের কারেন্ট জাল সরকারিভাবে ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও লালমনিরহাটের প্রায় সব বাজারে তা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। যা বন্ধে প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড জরিমানার বিধান থাকলেও তা বাস্তবে প্রয়োগ নেই। শুধু মাত্র মৎস্য সপ্তাহে একদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় জেলার বাজারগুলোতে।

এসব কারণে ডিম ছাড়ার আগেই প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ মা মাছ জেলেদের জালে আটকে বাজারে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও জেলার ছোট ছোট নদী ও সরকারি উন্মুক্ত জলধারা সমূহে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি আড়াআড়ি বাঁধের ফাঁদ বসিয়ে মাছের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এসব কারণে দেশি মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক প্রজাতির দেশি মাছ।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, দেশি মাছের উৎপাদনের জন্য ১৪টি মৎস্য অভয়াশ্রম থাকলেও সংস্কারের অভাবে ১০টিতে মাছ চাষ সম্ভব হয়নি। জেলার পাঁচটি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভায় মোট মাছের চাহিদা রয়েছে ৩০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় মাত্র ২৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। মাছ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদী বেষ্টিত এ জেলায়। আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মাছ চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় প্রায় সাত হাজার জেলের নিবন্ধন করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিসার ফারুকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে মৎস্য অভয়াশ্রমগুলো চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের কারেন্ট জাল জব্দে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে পাটগ্রামে দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। নিবন্ধিত সাত হাজার জেলেকে বর্ষার শুরু থেকে দুই-তিন মাস প্রণোদনা দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করলে দেশি মাছের উৎপাদন এ জেলায় তিন-চার গুণ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by