চট্টগ্রাম

ফুসরত ফেলার সময় নেই বাঁশখালীর শুটকি শ্রমিকদের

  প্রতিনিধি ২৫ নভেম্বর ২০২৩ , ৬:৪১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

ফুসরত ফেলার সময় নেই বাঁশখালীর শুটকি শ্রমিকদের

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন শুটকি পল্লীগুলোতে চলছে শুটকি উৎপাদন। শীতের এ মৌসূমে এই এলাকায় প্রচুর পরিমানে শুটকি উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে শুটকি পল্লীর শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাঁশখালী বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকা হওয়ায় উপজেলার ছনুয়া, বড়ঘোনা-গন্ডামারা, পশ্চিম পুঁইছড়ি, নাপোড়া, শেখেরখীল, শীলকূপের মনকিচর, জালিয়াখালী নতুন বাজার সংলগ্ন শুটকিপল্লী, সরল, বাহারছড়া ও খান-খানাবাদের সাগর উপকূল ও নদীর চরগুলোতে অর্ধশত শুটকি কিল্লায় সহস্রাধিক জেলে শুটকি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এখানে পুরোদমে চলছে দেশি মাছের শুটকি তৈরীর কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে বৃহৎ পরিসরে মাচা তৈরি করে শুকানো হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত নানা জাতের মাছ। বাঁশখালী জুড়ে একাজে নিয়োজিত রয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

জানা যায়, নভেম্বর থেকে মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত শুটকি উৎপাদনের উপযুক্ত মৌসুম। এ সময় নদী ও সমুদ্র থেকে জেলেরা টনকে টন বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরন করে রোদের তাপে সেগুলো শুটকিতে পরিনত করেন। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলেরা শুটকি ব্যবসার জন্য এই এলাকায় আসেন।

শুটকির জন্য প্রসিদ্ধ মাছ হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, পোয়া, রূপচাঁদা, লাক্ষা, চিংড়িসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ। এ অঞ্চলের শুটকী চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মণ শুটকি গুদামজাত করে বর্ষা মৌসুমেও উচ্চদামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হন। শুটকি প্রস্তুত করতে কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেয়া হয়না বলে এখানকার শুটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব শুটকি এখন রফতানি হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

জালিয়াখালী নতুন বাজার সংলগ্ন শুটকি চাষী মোঃ আনোয়ার জানান, ‘আমি আজ থেকে তিন মাস আগে মাচা তৈরিসহ শুটকির কাজ শুরু করেছি। এ ব্যস্ততা আরো ৫ থেকে ৬ মাস থাকবে। গত বছরের তুলনায় কিল্লার পরিমান ও পরিধি বহুগুণ বাড়িয়েছি। দিনব্যাপী পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও ব্যস্ত সময় দিচ্ছে। আমার কিল্লায় নারী শ্রমিকসহ ৩০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে। কাজ ও ক্যাটাগরি ভিত্তিক শ্রমিকের দৈনিক বেতন ৫শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। এবার সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। শুটকি পল্লীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাই শুটকীর বাজারমুল্যও কম।

শুটকি উৎপাদনকারী অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, তারা নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজির অভাব, সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শুটকির ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব। অন্যদিকে শুটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোন সরকারী নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক এবং মানসম্মত পদ্ধতি কোন উৎপাদকেরা গ্রহণ করছেননা। শুটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠি মনে করেন যে, এ মৌসূম তাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ।
আড়তদাররা জানান, নদি, সাগর থেকে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে শুটকী পল্লীতে নিয়ে এসে নারী শ্রমিকরা তা পরিস্কার করেন। এরপর পরিস্কার পানিতে মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকাতে দেয়া হয়। তিন চার দিনের রোদে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি শুটকি পল্লী থেকে সপ্তাহে কয়েকশত মণ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়।

জানতে চাইলে, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চরে শুটকি পল্লীতে সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জেলে ও শ্রমিক শুটকি উৎপাদনকারী একটি জনগোষ্ঠি তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন এই শুটকি উৎপাদনে। অতএব, জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারেন এজন্য তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by