দেশজুড়ে

ফেনীর সোনাগাজীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

  প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২১ , ৮:৪০:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

হাবীব মিয়াজী, ফেনী :

বঙ্গোপসাগরের উপক‚লীয় অঞ্চল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় এবার ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। তরমুজ পাইকাররা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানে পৌঁছে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশি ফলন, আকারে বড় ও স্বাদ ভালো হওয়ায় খুশির হাসি তরমুজ চাষীদের মাঝে। তাদের এখন দম ফেলার সুযোগও নেই। গত কয়েকদিন বেজায় গরম থাকায় দিনভর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ কেনার জন্য আসছে পাইকার ও আশপাশের খুচরা বিক্রেতারা।

চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষে ৯ কোটি টাকা খরচ করে অন্তত ২৩ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির প্রত্যাশা করছেন এসব এলাকার প্রায় অর্ধহাজার তরমুজ চাষী। কম সময়ে বেশি লাভ পাওয়ায় এবার উপজেলার চরচান্দিয়া, চরদরবেশ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, সমুদ্রের উপক‚লে জেগে ওঠা সোনাগাজীর চরগুলো বছরের পর বছর অনাবাদী পড়ে থাকতো।

 

বছরের কিছু সময় এসব অনাবাদী জমিকে মহিষের চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বেশিরভাগ সময়ই খালি থাকতো। এখন ওইসব অনাবাদী জমিতেই চলছে তরমুজ চাষ। সোনাগাজীতে তরমুজ চাষীদের বেশিরভাগ কৃষক নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে এসেছেন।

স্বল্প সময়ের জন্য চরাঞ্চলে আসা এ কৃষকরা ক্ষেতেই তাঁবু লাগিয়ে অস্থায়ী বসতি তৈরি করেছেন। ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা শেষ হলে তারা পুনরায় নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, চলতি মৌসুমে সোনাগাজীতে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এখন চাষীরা তরমুজ তোলা ও বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

 

স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা সোনাগাজী থেকে গাড়ী ভর্তি করে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলায়। নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা তরমুজ চাষী মিয়াধন জানান, বিগত ডিসেম্বর মাসে আমিসহ এলাকার কয়েকজন মিলে চরদরবেশ এলাকায় ২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করি। এখানে ক্ষেতের মাঝেই তাঁবু দিয়ে থাকা-খাওয়া ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। গত কয়েকদিন অতিরিক্ত গরমে হঠাৎ তরমুজ পাইকারদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমরা ইতিমধ্যে ১০ বিঘার তরমুজ ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। পাইকাররা দিনরাত কাভার্ডভ্যান ভর্তি করে এসব তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করলে আরো বেশি দাম পাওয়া যায়। তবে এতে কিছু ভোগান্তিও আছে।

 

চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট থেকে পাইকারি তরমুজ ক্রয় করতে আসা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, সোনাগাজীতে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি গত মৌসুমে স্বল্প পরিসরে এখান থেকে তরমুজ নিয়ে ভালো লাভ করেছিলেন। তাই এবার ২০ লাখ টাকা নিয়ে পাইকারি তরমুজ নিতে এসেছেন।

 

ইতিমধ্যে ৮ লাখ টাকার তরমুজ ক্রয় করে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছেন। তার মতে, এবার খুচরা বাজারে তরমুজের দাম বেশি। তাই লাভও ভালো হবে।

 

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, চলতি মৌসুমে সোনাগাজীতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আকারে প্রতিটি তরমুজ ৬ থেকে ৭ কেজি হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষীরা ভালো লাভবান হবেন। এছাড়াও স্বাদ ভালো হওয়ায় পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারাও সোনাগাজীর তরমুজ বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যেই তরমুজ তোলা শেষ হবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by