দেশজুড়ে

বিজয়নগরে রসের তৈরি লালি গুড়, এখন সারাদেশে

  প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ , ৫:৫৭:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয়নগরে রসের তৈরি লালি গুড়, এখন সারাদেশে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বর্তমানে বিভিন্ন ফল ফ্রুটে ও পর্যটনে সারা বাংলাদেশে সুনামের সাথে প্রচারে বিস্তার লাভ করলেও বর্তমানে আখের রসের লালি গুড় বিজয়নগরকে আরো বেশি প্রসিদ্ধ করে গড়ে তুলেছে।

এই লালিগুড় বিশেষ করে শীতকালে কৃষকরা তৈরি করে থাকেন। এই সময়ে গ্রামঅঞ্চলের প্রত্যেকটা মানুষ সকালবেলা তাদের নাস্তার সাথে পিঠা বানিয়ে অতি পছন্দের সাথে খাইয়ে থাকেন।

এবছর ১ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের লালি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। মূলত উৎপাদনে খরচ বাড়ায় এবং আখ চাষ কমে যাওয়ায় লালির উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলার কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে লালি উৎপাদন করেন চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগরে ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এ উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা আখ থেকে অন্তত ১শ টনেরও বেশি লালি উৎপাদন হবে আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।

এই প্রসিদ্ধ লালিগুড় বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুর ও বক্তারমুড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বাণিজিক্যভাবে লালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে লালি তৈরির কাজ শুরু করে পরিবারগুলো। মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনাবেচা।

এই লালি কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছেন বিজয়নগরে। লালির উৎপাদন দেখতে রীতিমতো ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে লালি নেওয়ার পাশাপাশি আখের রসও খেয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চলে লালি তৈরির কার্যক্রম।আর এই লালিগুড় বানানোর প্রথমে আখ মাড়াই, এবং মহিষের চোখ ঢেকে ঘানি টানানোর মাধ্যমে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রস জমিয়ে ছাকনি দিয়ে ছেকে কড়াইয়ে রেখে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগুনে জাল দিয়ে ঘন করা হয়। সেই রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের মঞ্জু আক্তার বলেন, এই লালির মৌসুমে আমাদের এলাকায় খুবই আমোদ প্রমোদে দিন কাটাই। লালি উৎপাদনের সময় কড়াই থেকে গরম লালি নিয়ে, যে যতটুকু খেতে পারে তাতে কোন মূল্য দিতে হয় না। আমরা অনেক আনন্দের সহিত প্রতিদিন এই লালি উৎপাদনের দেখি ও খেয়ে থাকি। নতুন নতুন ক্রেতারা অনেক সময় গরম লালি খরিদ করতে আসেন।

বক্তামুরার সাত্তার মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আখ চাষ করত। কিন্তু দিন দিন আখ চাষীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ঘানি টানানোর জন্য লাখ টাকা বা তার বেশি দিয়ে মহিষ কিনতে হচ্ছে, তাই চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ জানান, আমাদের কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের তেমন কোনো সহযোগিতা করা হয়নি, শুধু পরামর্শ দিয়ে আসছি। তবে যদি সরকারি ভাবে তাদের প্রতি নজর দেওয়া হলে, তাহলে নতুন আগ্রহীরা এই লালি গুড় তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে। তাতে আমাদের দেশের জন্য আরোও লাভজনক হবে। আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর প্রক্রিয়া অবলম্বন করার জন্য। তবে বর্তমানে উৎপাদন কমেনি, আগে যারা এই পেশায় জড়িত ছিল তারাই আছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by