দেশজুড়ে

ভাঙ্গা বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কাহালুর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ

  প্রতিনিধি ২৫ এপ্রিল ২০২০ , ৫:১২:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি : ১৯৭১ সালে জীবনের ঝ্ুঁকি নিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বগুড়ার কাহালু পৌর এলাকার উলট্র গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের শরীর কাতর হয়েছে ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। রোগ শোকে কাতর এই বীরমুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে জরাজীর্ন মাটির ভাঙ্গা বাড়ীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। জরাজীর্ণ তার মাটির বাড়ির এক পার্শ্বে ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ১৯৫২ সালে ১২ জুন কাহালু উপজেলার উলট্র গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ১০ শ্রেনীর ছাত্র। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ওই সময় আব্দুল হামিদ নিরীহ বাঙ্গালী মানুষের কথা বিবেচনা করে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে যখন ভারতে এ দেশের সূর্য সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে যান তখন আব্দুল হামিদও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভারতের বোয়ালদা ক্যাম্পে যান। তৃতীয় ব্যাচে তিনি ট্রেনিং নিয়ে দেশকে শুত্রæমুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। তিনি ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট এলাকায় পাকিস্থানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন। ৭নং সেক্টরে নুরুল আনোয়ার বাদশার নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধ করেছেন বলে প্রতিবেদককে জানান। মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে লক্ষ করা গেছে আব্দুল হামিদের মুক্তিবার্তা নং-০৩০৬১১০০০২৩  ও গেজেট নং- ১৯১৮। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। বর্তমানে এই গেরিলা যোদ্ধা অসুখ-বিসুখ আর আর্থিক অভাব –অনটনে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি ৪ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। ২ কন্যার বিয়ে দেওয়ায় তারা স্বামীর সংসারে। ৪ পুত্রের মধ্যে বড় ছেলে আরিফুল ইসলাম বলতে গেলে বেকার। ২য় ছেলে আশিকুল মাস্টার্স পাশ করে কাহালু মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে চাকুরীতে যোগদান করলেও তার বেতন হয়নি। তৃতীয় ছেলে আসাদুজ্জামান অর্থ কষ্টে লেবার হিসেবে কাজ করছে। ৪র্থ ছেলে আয়ুব আলী অর্নাসে পড়ছেন। এই মুক্তিযোদ্ধার নেই তেমন কোন স্বয়-সম্পত্তি ও আয়-রোজগার। মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় টাকায় তার ঠিকমত সংসার চলে না। তিনি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে থেকে ধার দেনা করেও নিজের কিছু সামান্য জায়গা বিক্রি করে বেশ কয়েক মাস আগে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অর্থাভাবে ঔষধপত্র কিনতে পারছেনা। তার ক্যান্সার রোগের জন্য যেগুলো ঔষধ ব্যবহার করার দরকার তার দাম অনেক টাকা। ঔষধবিহীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। এদিকে তার পূর্ব-পুরুষের আমলে নির্মাণ করা একটি মাটির ভাঙ্গা বাড়ীতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ। মাটির দেয়াল ফাটল ধরে ঘর ভেঙে পড়ছে। পুরো বাড়িটি এক ধরনের জরাজীর্ণ অবস্থা। কাহালু উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. মাছুদুর রহমান এর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ বাড়ির বিষয়ে একটি আবেদন দিয়েছেন তা যাচাইবাছাই করে আবেদন পত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।       

আরও খবর

Sponsered content

Powered by