আন্তর্জাতিক

ভারতে অবিবাহিত নারীও পেল গর্ভপাতের অধিকার

  প্রতিনিধি ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৭:২৩:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ আজ বৃহস্পতিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, গর্ভপাতের অধিকার দেশের সব নারীর জন্যই প্রযোজ্য এবং তিনি বিবাহিত না কি বিবাহিত নন তা সেখানে কখনোই বিচার্য হতে পারে না।

দেশটির শীর্ষ আদালত মন্তব্য করেছেন, শুধু অবিবাহিত হওয়ার জন্য কোনও নারীকে গর্ভপাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করাটাও অসাংবিধানিক।

এই গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণার সময় বিচারপিত ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়, এ. এস. বোপান্না ও জে. বি. পারডিওয়ালার বেঞ্চ ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ঘটা ধর্ষণকেও এক রকম ধর্ষণ বলে একরকম স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও তা শুধুমাত্র গর্ভপাতের অধিকারের পটভূমিতেই।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই প্রসঙ্গে বলেছেন, মেডিকেল টার্মিনেশন অব প্রেগনেন্সি অ্যাক্ট বা গর্ভপাত আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাতে ম্যারিটাল রেপকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এই পর্যবেক্ষণ ‘ম্যারিটাল রেপ’ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ রায়ের পথ প্রশস্ত করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এটি ভারতে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত একটি ইস্যু, যার পক্ষে-বিপক্ষে বহু যুক্তি-তর্ক আছে।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে আরও বলেছে, একজন সিঙ্গেল বা অবিবাহিত নারী যদি তার অবাঞ্ছিত প্রেগনেন্সি গর্ভপাতের মাধ্যেমে শেষ করে দিতে চান তাহলে সেটা তার মৌলিক অধিকার।

তাকে যদি ওই অবাঞ্ছিত প্রেগনেন্সি টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, তাহলে নিজের জীবন কোন খাতে বইবে সেটা স্থির করার অধিকার রাষ্ট্র তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতিরা।

আজকের এই রায়টি এসেছে ২৫-বছর বয়সী এক অবিবাহিত নারীর আবেদনের পটভূমিতে। তার গর্ভপাতের অধিকার খারিজ করে দিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছিল তার বিরুদ্ধেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন।

দিল্লি হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, ওই নারী অবিবাহিত বলে গর্ভপাত আইনের সুবিধা পেতে পারেন না এবং যে শারীরিক সম্পর্কের কারণে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন সেটাও ছিল পারস্পরিক সম্মতির (কনসেনসুয়াল) ভিত্তিতেই। কিন্তু তিনি সুপ্রিম কোর্টকে জানান, তার সঙ্গী পরে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।

তা ছাড়া তিনি একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও তার কাঁধেই। ফলে একটি পিতৃহীন সন্তানকে প্রতিপালন করার ক্ষমতাই তার নেই।

এরপর গত ২১শে জুলাই কোর্ট নির্দেশ দেন, মেডিকেল বোর্ড যদি বলে গর্ভপাত করালে ওই নারীর কোনও শারীরিক ক্ষতি হবে না তাহলে তিনি তার গর্ভের ভ্রূণটি শেষ করে দিতে পারবেন। এরপর কোর্ট বলেন, ২০২১ সালে দেশে যে গর্ভপাত আইন সংশোধন করা হয়েছে তাতে হাজবেন্ড বা স্বামীর বদলে পার্টনার বা সঙ্গী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ফলে বিচারপতিদের ব্যাখ্যা ছিল, গর্ভপাতের অধিকার শুধু বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক এটা দেশের পার্লামেন্টও চায় না। আজকের রায় সেই অধিকার কার্যত ভারতের বিবাহিত বা অবিবাহিত- সব নারীর জন্যই সম্প্রসারিত করল।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by