মার্চ থেকে বিমানের পেসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম ডিজিটালাইজড হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

আগামী মাস থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পেসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেমকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অনলাইনে টিকিটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর চেক-ইন সবকিছু অনলাইনে হবে। এটা আমাদের প্রবাসীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর সবদেশে এই ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে ছিলাম।

পাশাপাশি বিমানের সেবার গুণগত মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং নতুন প্রযুক্তি শেখা ও গ্রহণে মনোযোগী হবার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি শেখা ও সেটাকে নিয়ে আসা এবং কার্যকর করার দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যাতে আমাদের আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে না হয়। এতে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়।

আজ বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

সরকারপ্রধান বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম বিমানই সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে।

অতীতে দুরাবস্থা থাকলেও বর্তমানে একটি দক্ষ ও অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সততা ও দক্ষতার সঙ্গে যেন গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। এজন্য প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় লোকবল যেমন দরকার তেমনি যত দ্রুত সম্ভব ইউনিটটা তৈরি করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিমান কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা চাই আমাদের কার্গো হ্যান্ডেলিং ও বিমান হ্যান্ডেলিং সবকিছু খুব আন্তর্জাতিক মানের হোক। যাত্রীরা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করা যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের কাস্টমস সিস্টেমটাও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে হবে। কারণ, মানুষ যখন বিদেশ থেকে আসে, হয়তো কিছু পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসতে চায়। কাজেই তারা যেন কোনও প্রকার হয়রানির শিকার না হন। যদি পুরো ডিজিটালাইজড হয়ে যায় তাহলে খুব সহজেই যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হবে।

বিমানের আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। করোনার সময়েও কিন্তু এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। কাজ অব্যাহত রয়েছে। উচ্চশক্তি সম্পন্ন রাডার আমরা স্থাপন করব, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। যেটা আমাদের বিমান চলাচলে, শুধু আমাদের বিমান না, আমাদের আকাশসীমা দিয়ে অন্য যত দেশের বিমান যাবে সবার জন্যই সেটা আমরা করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আমরা সম্প্রসারণ করে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ আমাদের এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে পড়ে। যেজন্য এই জায়গায় আমাদের অনেক অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর দরকার।

তিনি আরও বলেন, মালদ্বীপে ইতিমধ্যে বেসরকারি খাত থেকে বিমান যাওয়া শুরু করেছে। আমি মনে করি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সব জায়গায় লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখার দরকার নেই। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা এবং কার্গো পরিবহন একান্তভাবে দরকার।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনও বক্তৃতা করেন। বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিমানের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশন করা হয়।