প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২২ , ৮:৩১:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর বাঘায় এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে চাষিরা হলুদ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে বিধায় এবার চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন। তবে বীজ সংরক্ষণে সরকারি ব্যবস্থাপনা না থাকায় মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘদিন থেকে বীজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি এ এলাকার চাষীদের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও বাজার এবং চাতাল ঘুরে জানা যায়, মাঠে কৃষকরা হলুদ উঠাতে ব্যস্ত। চাষীরা যানবাহনে করে বস্তা বস্তা হলুদ বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন। ব্যবসায়ীরা কাঁচা হলুদ কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে।
আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোচর মহল্লার হলুদ মজবুল হোসেন, সেলিম উদ্দিন, হাফিজুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলায় পাবনায়, গাঙ্গীয়া, সোনামুখী, ডিমলা বারী-১ প্রভৃতি জাতের হলুদ চাষ হয়। এবছর গাঙ্গীয়া জাতের হলুদ ফলন ভাল হয়েছে। এ জাতের হলুদ আকারে মোটা এবং রঙ অন্যান্য হলুদের তুলনায় ভাল। প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৫৫ মণ উৎপাদন হয়।
প্রতিমণ কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত। হলুদ চাষে জৈব সার ব্যবহারে খরচ খুব কম হয়। বিঘা প্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায়। গোচর গ্রামের হানিফ আলী জানান, বাগানের ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদ চাষ ভাল হয়। একসাথে ফল ও হলুদ দুটো পাওয়া যায়।
হামিদকুড়া গ্রামের বিরাজ উদ্দিন জানান, এ বছর বীজের দাম বেশি হওয়ায় এবং রোপণের সময় বীজ সংকটের কারণে বেশি জমিতে আবাদ করা যায়নি। হলুদ উঠানোর সময় বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আগামীতে অনেক চাষী হলুদ চাষ করতে আগ্রহী হবে। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানান তিনিসহ এলাকার চাষিরা।
হলুদ চাষি জহুরুল ইসলাম এবছর আড়াই বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করে ১০০ মণ হলুদ পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৯৫০ টাকা দরে ৮০ মণ হলুদ বিক্রি করেছেন। এবার হলুদ বিক্রি কয়ে ভালোই লাভ হয়েছে।
হলুদ ব্যবসায়ী একরামুল হক জানান, আড়ানীর হলুদের সুনাম দেশ ব্যাপী রয়েছে। আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার হাটে হলুদ কিনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যায়।
আড়ানীর চাতাল ব্যবসায়ী রহমান বাবলু জানান, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক চাতাল রয়েছে। কাঁচা হলুদ কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে কিছু দিন ঘরে রেখে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ কেজি শুকনা হলুদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি প্রায় ৩ হাজার মণ কাঁচা হলুদ কিনে সিদ্ধ করে শুকাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, এ বছর উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলার পাশ দিয়ে বড়াল নদী বয়ে যাওয়ায় জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। উচু ও ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদের ফলন ভাল হয়। এবার উপজেলার হলুদ আমের মতো বিদেশে রফতানি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
বীজ সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলুদ বীজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তবনা পেশ করা হবে।