রাজশাহী

রূপপুর প্রকল্পের রড চুরির চেষ্টা, নেপথ্যে এমপিপুত্র!

  প্রতিনিধি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৯:০৮:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

এমপিপুত্রের নেতৃত্বে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পাঁচ ট্রাক লোহা চুরির খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনার রূপপুর পারমানবিক প্রকল্প সংলগ্ন নতুন হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যবসায়ীর নাম সোহেল রানা (৪৫)। তিনি প্রকল্পের সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

ঘটনার পর প্রকল্পের নিরপত্তাকর্মীরা লোহাসহ পাঁচটি ড্রাম ট্রাক আটক করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রানা জানান, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে দোলন বিশ্বাস ও তার সহযোগীদের সিন্ডিকেট রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত লৌহ সামগ্রী অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশে পাঁচটি ড্রাম ট্রাকে প্রকল্প এলাকা থেকে বের করার চেষ্টা করছিল। বিষয়টি আমার ও আমার সহকর্মী কামরুল হাসান রাসেলের নজরে আসলে, আমরা প্রকল্পের প্রশাসনিক বিভাগকে জানাই। দায়িত্বরত প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে লৌহ সামগ্রী ভর্তি ঐ পাঁচটি ট্রাক আটক করে। এসময় ট্রাক চালকদের কাছে বৈধ গেট পাস ও চালানপত্র না থাকায় তাদের প্রকল্প এলাকা থেকে বের হতে না দিয়ে আটকে দেওয়া হয়।

পরে প্রকল্প থেকে লৌহ সামগ্রী বের করতে না পারার খবর এমপিপুত্র দোলন বিশ্বাস জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন এবং ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নতুনহাট এলাকায় আমাদের বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা করে।

সোহেল রানা আরও জানান, সন্ত্রাসীরা অফিসে ঢুকেই কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ভাঙচুর ও আমাকে লোহার রড দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এসময় কোম্পানির নারীকর্মীরা ছুটে এসে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে তারা চলে যায়।

বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান রাসেল বলেন, রূপপুর প্রকল্পে আমরা দীর্ঘদিন স্বচ্ছতার সাথে ক্লিনিং সার্ভিস পরিচালনা করছি। প্রকল্প এলাকা থেকে জাল কাগজ তৈরী করে দীর্ঘদিন ধরে দোলন বিশ্বাসের অনুসারী একটি চক্র মালামাল পাচার করে বিক্রি করে। এই চক্রের হয়ে প্রকল্প এলাকায় কাজ করেন সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকিমথ এর দোভাষী নাজমুল ও অমিত। তারা প্রতিনিয়ত ঈশ্বরদী শহরে দোলন বিশ্বাসের সাথে পরিকল্পনা করে প্রকল্পের মালামাল লুট করে আসছে।

রাসেল আরও জানান, যেহেতু আমরা প্রকল্পে ক্লিনিং সার্ভিস দেই এ কারণে কোনো কিছু খোয়া গেলেই কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। নিজেদের স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে আমরা এই চক্রের অপকর্ম প্রশাসনকে অবহিত করায় চক্রটি হাতে নাতে ধরা পড়ে। এ কারণেই দোলন বিশ্বাস ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের হত্যার চেষ্টা চালায়। আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রী শারমিনা ইয়াসমিনকে গলাকেটে হত্যার হুমকিও দিয়েছে তারা।

কামরুল হাসান রাসেল বলেন, ঘটনার পর গুরুতর আহতাবস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রানাকে নিয়ে ভয়ে আমরা ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারিনি। পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করলে সেখানেই দোলনের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের পিছু নেয়। প্রাণ ভয়ে আমরা ঢাকার পথে রওনা হয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতিকুল ইসলাম জানান, এমপিপুত্র দোলন বিশ্বাসের অনুসারী জয়নগর এলাকার ফরিদ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা থেকে বিভিন্ন মালামাল মাঝে মাঝে বের করা হয়, তবে তা বৈধ না অবৈধভাবে তা আমার জানা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাও এই চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর জানান, বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা ও এক ব্যক্তিকে জখমের খবর পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে লোহা চুরি চক্রের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাসের পুত্র দোলন বিশ্বাস বলেন, রূপপুর প্রকল্পের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকা থেকে মালামাল চুরি অসম্ভব কল্পনা। রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমাকে জড়িয়ে অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে।

Powered by