চট্টগ্রাম

শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণায় সেতুর নাম পরিবর্তন শহরে জনমনে তুলকালাম

  প্রতিনিধি ১ অক্টোবর ২০২০ , ৭:৩৯:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

খায়রুল কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের প্রধান সড়ক ধরা হয় টিএ রোডকে। এ সড়কের মাঝামাঝি রয়েছে টাউন খাল নামে পরিচিত একটি সেতু যা শহরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর পরিষদের এক সভায় ওই সেতুটির নাম রাখা হয়েছে ‘থানা ব্রিজ’। এর আগে মঙ্গলবার পৌরসভার পক্ষ থেকে ওই সেতুতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে সেতুটি ‘ফকিরাপুল’ হিসেবে পরিচিত থাকায় শুনতে খারাপ লাগে বলে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে এ সেতুতে বসে যেন কেউ ভিক্ষাবৃত্তি না করতে পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওই সেতুতে বসে ভিক্ষা করতেন এমন কয়েকজনকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও পৌরসভার পক্ষ থেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে কর্তপক্ষ জানিয়েছেন। নতুন রাখা ওই নাম নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিক কিংবা অন্য সব বিষয়কে ছাপিয়ে এ সেতু নিয়ে দু’দিন ধরে চলছে জনমনে তুলকালাম। অনেকে এটাকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ কিংবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছেন।
কথা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের শহরকে সুপরিচিত ও নান্দিনিক করে তুলেছে টাউন খালটি। শহরের দুটি ভাগকে বিভক্ত করা খালটি সংযোগ করার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এক সময় এ জায়গাটির সামনে ঘোড়ায় চলাচল করা গাড়ি এস থামতো। তা থেকেই সেতুর এলাকার নাম ঘোড়াপট্টি নামকরণ করা হয়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই সবাই বলতো। পরবর্তীতে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসতো বলে ফকিরাপুল নাম হয়ে যায়। আমি মনে করি নাম পরিবর্তনের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতো। ঘোড়াপট্টির পুল দিলে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল থাকতো।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেখক, গবেষক ও সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেনের সাথে কথা বল্লে তিনি জানান, ‘সেতুটি যেখানে আছে এর কাছেই যাতায়তের ঘোড়া এসে দাঁড়াতো। ঘোড়া দাঁড়াতো বলে এলাকাটির নাম ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি জহিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘এটা অনেক আগে থেকেই ফকিরাপুল হিসেবে লোকমুখে পরিচিত। তবে ফকিরদেরকে কেন্দ্র করে এ নাম হওয়ায় সেটা পরিবর্তন করার বিষয়টি মানতে পারি না। কারণ ফকিররাও তো মানুষ।’
এদিকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা চলছে। জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পিযূষ কান্তি আচার্য্য তাঁর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘোড়াপট্টি ব্রিজেরই নামকরণের দাবি জানাচ্ছি, থানা ব্রিজ নয়। কারণ ঘোড়াপট্টির সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস জড়িত।’ কবি মো. মনির হোসেন এক কমেন্টস এ লিখেছেন, ‘সেতুটির নামকরণ শহরের কোনো সমাদৃত-খ্যাতিমান মানুষের নামেও হতে পারে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোরের দপর্ণকে জানান, ‘ফকিরাপুল নামটা শুনতে খারাপ শোনায় তাই বুধবার পৌর পরিষদের সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by