অসংখ্য নেতাকর্মী মামলা-হামলা, গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও সরকারকে হটাতে না পারার দায় বিএনপির সবার বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তিনি কারাগারে। আন্দোলন ছাড়া কোনোদিন স্বৈরাচারকে সরানো যায়নি। এ সরকারকেও যাবে না। গণতন্ত্রের জন্য সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ৯০ এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা দখলে ২৪ মার্চ কালো দিবস’ শীর্ষক আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।

সারাদেশে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনা ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার করোনাকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নাকি পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার দরকার ছিলো সেসবের কোনো কাজই তারা করে নাই। এখন আইসিইউ বেড নেই। কেন, এক বছর ধরে কি করলেন? কেনো মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেন না।

আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক বিনস্টের সবকিছু হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখুন, হিন্দু সম্প্রদায়ের কত জমি, কত বাড়ি কারা দখল করে আছে। বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে আছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এতটুকু জায়গায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাদের রাখা, তাদের ভরন-পোষণ করা, তাদেরকে সুন্দরভাবে রাখা-এটা বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকার এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা না করে এটাকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করার জন্য আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কোনো রাষ্ট্র সফর করেননি। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতের সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বললেও সেই দেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কোনো কথা বলেনি। চীন আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারন সরকারের ব্যর্থতা। তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

তিনি বলেন, এই সরকার অত্যন্ত কৌশলী। সবসময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এটা অবলম্বন না করলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি, তারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এজন্য তারা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আড়ালে পালন করছে মুজিব বর্ষ। সুবর্ণজয়ন্তী পালন করলে জনগণকে সাথে নিয়ে করতেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠান করছে সেখানে শুধুমাত্র প্রশাসন, আমলা, কিছুসংখ্যক তাবেদার গোষ্ঠি। আর তো কাউকে দেখা যায় না। এর বাইরে কিছু বিদেশি মেহমান নিয়ে আসছেন। সেই মেহমানদের দিয়ে বলাতে চান- এক অভূতপূর্ব অলৌকিক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের সামনে কোনো অভাব নাই। অথচ আমাদের চালের দাম ৮০ টাকা, তেলের দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষের সব কিছু ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ওরা যতই বলুক, যতই ঢাকঢোল পিটাক, সত্যটা হচ্ছে গরিব আরো গরীব হচ্ছে, ধনী আরো ধনী হচ্ছে। মেগা প্রকল্প শুধুমাত্র মেগা দুর্নীতি তৈরি করছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় সভায় সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।