দেশজুড়ে

সিলেট নগরের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত, ভূমিকম্পে হেলে পড়েছে বহুতল ভবন

  প্রতিনিধি ৩০ মে ২০২১ , ৭:১৭:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

বাপ্পা মৈত্র, সিলেট ব্যুরো:

কয়েক দফার ভূমিকম্পে সিলেট নগরে একটি ভবন হেলে পড়েছে পাশের ভবনের কাছে। ভূমিকম্পের মধ্যেই গত শনিবার দুপুরের দিকে নগরের পনিটুলা এলাকায় আহাদ মঞ্জিল নামের ওই ভবনটি হালকা হেলে পড়ে।

পরে সিসিক কর্তৃপক্ষ এ ভবনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে নগরের এরকম ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। যার মধ্যে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবনও রয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরের ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গতকাল শনিবার ভূমিকম্পে হেলে পড়া আরও দুটি ভবনকে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার সরেজনিনে গিয়ে দেখা যায়, পনিটুলার আহাদ মঞ্জিলের সামনে ভিড় করছেন নগরের বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতা, রয়েছে পুলিশের উপস্থিতিও। সবাই হেলে পড়া ভবনটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আর বলা বলি করছেন আবার ভূমিকম্প হলে এ ভবনটি ধসে পড়তে পারে। ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনটির বেশির ভাগ ইউনিটেই ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। তবে আহাদ মঞ্জিলের মালিক পক্ষের দাবি তাদের ভবন নিয়ে সিসিকি তামাশা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ভাড়াটিয়া আতঙ্কে ভবন ছেয়ে যান নি, আর যাবেন ও না বলে জানিয়েছেন।

পনিটুলাস্থ আহাদ মঞ্জিলের আশপাশের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আহাদ মঞ্জিলের সব ভাড়াটিয়াই চলে যাচ্ছেন আতঙ্কে। গত শনিবার থেকেই তারা দেখেছেন ভাড়াটিয়া চলে যেতে। ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রাও।

আহাদ মঞ্জিলের কেয়ারটেকার ইসলাম উদ্দিন ও মালিকের ভাতিজা ইমন দাবি করেন- ভবনটিতে সব ভাড়াটিয়াই রয়েছেন, তারা ছেড়ে যেতে চান না। শুধু এক পরিবার চলে গেছেন তাদের নিজস্ব বাসার কাজ শেষ হওয়াতে। এসময় তারা জানান, এখনও ৬ তলার এই ভবনে ৪৫ থেকে ৫০ থেকে মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের আতঙ্ক নেই, আর এ ভবনটিও হেলে পড়েনি। সিসিক কর্তৃপক্ষ ভবনটি দেখে গেলেও কাউকে ছেড়ে যেতে বলেন নি।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে নগরে ২৩টি বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভবনগুলো হল- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটে হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ। এছাড়াও নগরেরশেখঘাট এলাকায় শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানি-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার। এর মধ্যে পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। সিলেটে একদিনে ঘন ঘন ভূমিকম্পের প্রভাবে নগরের পাঠানটুলা ও দর্জিপাড়া এলাকায় দুইটি ৬ তলা ভবন হেলে পড়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ভবন দুটি পরিদর্শন করেছে। ভবনের বাসিন্দাদের দ্রæত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, গত শনিবার সিলেটে পাঁচবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পে পাঠানটুলা এলাকার পনিটুলায় একটি হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান- একটি ভবন আরও একটি ভবনের উপর এক ইঞ্চি হেলে পড়েছে ভবন দুটির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

 

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by