দেশজুড়ে

সীমান্তে অপেক্ষমান অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

  প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৪:১৯:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সীমান্তে অপেক্ষমান অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় সীমান্ত ঘেঁষা ঘুমধুম তমব্রু সীমান্তে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের মাঝে গত কয়েকদিনের ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে এরই মধ্যে তুমব্র সীমান্তের ৩ গ্রাম কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া, বাজার পাড়া,জন মানব শূন্য হয়ে পড়েছে।

গ্রামে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া নারী ও শিশুরা নিজেদের মতো করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।সীমান্তের পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে,এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ ( বিজিপি) ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে তুমুল গোলাগুলির ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির বিজিপি সৈনিক, চাকমা, রোহিঙ্গা সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের হাজারের কাছাকাছি লোকজন সীমান্তে জড়ো হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তুমব্রু সীমান্তের ডেকুবুনিয়া এলাকায় রাতভর থেমে থেমে চলেছে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি যা রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত চলমান আছে। এদিকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শনকালে মায়ানমার অভ্যন্তরে থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় বিজিবি আছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম।

তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখের পর থেকে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অত্যন্ত চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার এলাকাগুলো অশান্ত হয়ে যায়। তাদের সরকারি বাহিনী ও কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীদের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।

তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ধারণা দেখা দেয়, যার ফলে বিজিবি সদর দফতরে নির্দেশনা অনুযায়ী,সীমান্তে বিজিবি সংখ্যায় শক্তি বৃদ্ধি করেছি। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যখন চরম আকার ধারণ করে, কয়েকদিন আগে পালংখালি বর্ডার এলাকা ভিতরে কিছু মর্টার সেল এসে পড়ে। তবে সেখানে কেউ আহত বা নিহত হয়নি। তারপরও মায়ানমার বিজিপি’র কাছে কঠোরভাবে প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে, গত পরশু রাত থেকে ঘুমধুম, তমব্রু, বাইশফাঁড়ি এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং মায়ানমার সরকারি বাহিনীর মধ্যে যথেষ্ট সংঘর্ষ আকার ধারণ করে এবং আমরা বর্ডারকে প্রটেক্ট করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করি, যা আমরা সফল হয়েছি। তিনি মায়ানমার বিজিপি প্রসঙ্গে বলেন, গতকাল সকালে হঠাৎ করে যখন বিজিপি বাহিনীরা তারা কোন ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছিল না, তখন জীবন বাঁচানোর জন্য তারা বর্ডারে অনুপ্রবেশ করতে চাই।

আমরা তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনুযায়ী তাদেরকে সেইভ (নিরাপত্তা) মেসেজ দিই, তারপর তারা তাদের অস্ত্র সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে আমাদের কাছে।এরপর তাদেরকে সেইভ (নিরাপত্তা) হ্যাভেনে থাকা খাওয়া ব্যবস্থা করি। তাদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছে।

মর্টারশেল পড়ে হতাহতের ব্যাপারে বলেন, আজ দুপুরে মর্টারশেল আঘাতে দুইজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বাহিনী (বিজিপি) কে কঠোর প্রতিবাদ লিপি জানিয়েছি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি হেডকোয়ার্টার কাজ করে যাচ্ছে। এবং মিয়ানমার সরকারের কাছে কনসাল তুলে ধরেছি। এই পর্যন্ত আমাদের বর্ডার গার্ড কোন ভাবে রোহিঙ্গা বা অন্য কোন বিছিন্নতাবাদী গ্রুপ যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বিজিপি অনুপ্রবেশ-এর প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আমাদের সদর দফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। ৯৫ জনের বিজিপি মধ্যে সাতজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে তিনি জানান।এদিকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, চলমান সীমান্ত সংঘর্ষে মিয়ানমারের অনেক বেসামরিক নাগরিক সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ ঢুকে পড়তে পারে, তবে এটা আমরা কোন ভাবেই কামনা করি না।

তিনি বলেন,সীমান্তে আটকে পড়া পরিবারগুলোর খাদ্যসংকট সহ মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার উচিত এই সময় তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আশা। তবে কোন ভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক হবে না।এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই পর্যন্ত ১০৬ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণের পর ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

পালিয়ে আশা মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আহত ৯ জনকে কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে,হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাদের নাম জা নি মং এবং নিম লাইন কিং , ক্যে থিন সিন , ইয়ো ফো , মং র, মুলিউন থং , কিন মং জ এবং আরও ২ জনের নাম জানা সম্ভব হয় নি।

আরও বেশ কয়েকজনকে কুতুপালং এর এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by