আন্তর্জাতিক

হিজাব ইসলামে অপরিহার্য নয়’, নিষেধাজ্ঞাই বহাল রাখল কর্নাটক হাইকোর্ট

  প্রতিনিধি ১৫ মার্চ ২০২২ , ৫:৪৫:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

হিজাব পরা বাধ্যতামূলক কোনো ধর্মীয় অনুশীলন নয় বলে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের হাইকোর্ট এ গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করেছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার চেয়ে কর্নাটকের জনাকয়েক মুসলিম ছাত্রী যে আবেদন করেছিলেন, সেই মামলাতেই আদালত আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) এই রায় দিলেন।

পিটিশনকারীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি রিতু রাজ অবস্থির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, সরকারি স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা কী পোশাক পরে আসবে, সেই ইউনিফর্ম কোড বেঁধে দেওয়ার পূর্ণ অধিকার কর্তৃপক্ষের আছে। মেয়েদের হিজাব পরা কখনোই ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়।

ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ২৫-এ যে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেয়, হিজাব পরার বিষয়টি তার আওতায় পড়ে না বলেও আদালত মন্তব্য করেছে।

প্রধান বিচারপতি রিতু রাজ অবস্থি বলেন, ‘আমাদের বিবেচিত মতামত হচ্ছে, মুসলিম নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ নয়।’

এই রায় ঘোষণার আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কায় রাজধানী বেঙ্গালুরুসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। হিজাব নিয়ে বিতর্কের জেরে দক্ষিণ কর্নাটকের উদুপি, শিভামোগাসহ যে জেলাগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, সেখানে স্কুল-কলেজও সব বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে কর্নাটক রাজ্যে হাইস্কুল ও কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে ক্লাসে আসা নিষিদ্ধ করা, আর এ নিয়ে গেরুয়া স্কার্ফধারী হিন্দুত্ববাদীদের সাথে সংঘাতকে কেন্দ্র করে হঠাৎ সারাদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কর্নাটক রাজ্যের সেই বিক্ষোভ পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

তখন অনলাইনে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও – যাতে দেখা যায়, কর্নাটক রাজ্যের এক কলেজে কালো বোরকা আর হিজাব পরা এক মুসলিম ছাত্রীকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে শ্লোগান দিয়ে হয়রানি করছে গেরুয়া কাপড়ধারী একদল তরুণ, আর ছাত্রীটিও তাদের পাল্টা জবাব দিচ্ছেন ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান দিয়ে।

এই কলেজটির ছয়জন মুসলিম ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে তাদেরকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্লাস করতে দেয়া হচ্ছে না – কারণ তারা ছাত্রীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়াও মাথায় হিজাব পরবেন বলে দাবি জানাচ্ছিলেন।

এই ছয় ছাত্রীর একজন আলমাস এ এইচ বিবিসিকে বলেন, তাদের কয়েকজন পুরুষ শিক্ষক আছেন, তাই তাদের সামনে মাথার চুলঢাকা পোশাক পরা দরকার  এবং এ কারণেই তারা হিজাব পরছেন।

সরকারি কলেজটির কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তারা শুধু ক্লাসে হিজাব না পরতে বলেছেন, ক্লাসের বাইরে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরতে কোনো বাধা নেই।

উদুপি জেলার এ কলেজের হিজাব পরা একদল ছাত্রীকে ঢুকতে না দিয়ে গেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে – ফেব্রুয়ারির শুরুতে এমন এক ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। এরপর কর্নাটক রাজ্যের অন্যান্য হাইস্কুল ও কলেজেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কলেজে হিন্দু ছাত্ররা গেরুয়া শাল বা স্কার্ফ পরে ক্লাসে আসতে শুরু করে। হিন্দু ছাত্র ও ছাত্রীরা তাদেরই সহপাঠীদের হিজাব পরার বিরুদ্ধে মিছিল বের করে।

কর্নাটক রাজ্যের কয়েকটি শহর থেকে বেশ কিছু সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।

২০১৮ সালে প্রতিবেশী কেরালা রাজ্যে দুই মুসলিম ছাত্রী হিজাব ও লম্বা হাতাওয়ালা জামা পরার আবেদন করলে তাদের স্কুল তা প্রত্যাখ্যান করে। এ ব্যাপারে একটি আদালতে মামলা হলে বিচারপতি এ. মুহাম্মদ মুশতাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকারের পক্ষে রায় দেন।

কর্নাটকে এর আগে অন্য আরেক ঘটনায় একটি সরকারি কলেজ তাদের ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব এবং হিন্দু প্রতীক গেরুয়া স্কার্ফ – দুটিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। -বিবিসি

আরও খবর

Sponsered content

Powered by