বাংলাদেশ

২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:৫৬:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের পথে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। সেজন্য আপনাদের সবাইকেই প্রচেষ্টা নিতে হবে। সবাই সেই প্রচেষ্টা নেবেন ও সেটাই আমি আশা করি।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘৪২ তম জাতীয় সমাবেশ-২০২২’ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফীপুরে আনসার ভিডিপি একাডেমির মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি অর্জন বৃদ্ধি পেয়েছে ও অর্থনীতিও যথেষ্ট শক্তিশালী হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি আপনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কাজেই সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন সেটাই আমি আশা করি।

তিনি এ প্রসঙ্গে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও এ অঞ্চলের মানুষকে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মুক্ত রাখা এবং উন্নত জীবন দেয়ার লক্ষ্যে শতবর্ষ মেয়াদী ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নেও তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, এই পরিকল্পনা আমি দিয়ে গেলাম যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আর কখনও কেউ ব্যাহত করতে না পারে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।

তিনি বলেন, সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ব্রডব্যান্ড প্রতি ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে, মহাকাশে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি, অনলাইনে সব কাজকর্ম হচ্ছে। ভূমি পরর্চা থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন ডিজিটালাইজড হচ্ছে। করোনার মধ্যে আর্থিক প্রণোদনাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসময়ে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। তাদের জন্য জমি দিচ্ছি, ঘর করে দিচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালানোর যে ঘোষণা দিয়েছিলাম সে অনুযায়ী ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আনসার সদস্যদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। মোট ১৬২ জন আনসার সদস্য পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদনও জানানো হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশকে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। আর এ ক্ষেত্রে এই বাহিনী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদ দমনে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শান্তির দেশ ও আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের উন্নয়ন মানেই প্রতিটি পরিবারের উন্নয়ন।

তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবার স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করুক, সুন্দরভাবে বাঁচুক সেটাই আমরা চাই। সেজন্যই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভিডিপি সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ আমরা চাই তারা যার যার এলাকায় গিয়ে কাজ করবেন। আর একটি বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি ‘বাংলাদেশ আনসার ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট’ নামে একটি ফান্ড গঠন করা হবে। যারা অসুবিধায় পড়েন বা বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়লে ওই ট্রাস্ট থেকে যাতে সাহায্য সহযোগিতা করা যায় সেজন্য সিড মানি দিয়ে এই ট্রাস্ট ফান্ড আমরা করে দেব।

একইসঙ্গে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে অবস্থিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্কুল ও কলেজে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা এসময় ক্রীড়া ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন করায় আনসার সদস্যদেরকে অভিনন্দন জানান।

সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার যেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয় সে পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু তাদের কো-অপারেটিভের প্রশিক্ষণ থাকে সেজন্য তাদেরকেও আমরা সম্পৃক্ত করেছি। এর ফলে অনেক পরিবারই এখন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। এটি দেশের দারিদ্র বিমোচনেও বিরাট অবদান রাখছে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নটা গতিশীল হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস প্রতিরোধে আনসার সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত  যখন বাস, গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, এমনকি রেলগাড়ি, রেললাইনে যখন অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছিল, আগুন দিচ্ছিল, আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছিল, তখন রেললাইনের দায়িত্ব আনসার ভিডিপিকে দেয়া হয়েছিল। তারা তা যথাযথভাবে পালন করে যান। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে অনেককে জীবনও দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আনসার ভিডিপি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ পদোন্নতি, উন্নত প্রশিক্ষণ, রেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার এবং তাদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার সদস্যদের বীরত্বের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ১২ জন বীর আনসার সদস্য মুজিবনগরের আম্র কাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এ বাহিনীকে গৌরবান্বিত করেছে।

তিনি ভাষা শহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ৬৭০ জন বীর আনসারসহ সব শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আনসার একাডেমিতে নবনির্মিত মুজিব প্রাঙ্গন, কেন্দ্রীয় মসজিদসহ আনসার সদস্যদের বিভিন্ন স্থাপনারও উদ্বোধন করেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by