বাংলাদেশ

আবারও বেড়েছে চালের দাম

  প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৬:২১:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

আমন চাল বাজারে চলে এসেছে। এর পরও কমছে না দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম। মোটা চাল ন্যূনতম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ টাকা। আর মাঝারি ও চিকন চালের দাম বেড়েছে ২-৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে নতুন চাল এলেও মোটা চাল ব্রি-২৮  এখনো ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। অন্যদিকে বাজারে কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। তবে সামান্য কমতির দিকে সবজির দামও। তেল, চিনি, আটা, ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুত করছেন। এতে বাজারে নতুন চাল এলেও দাম কমছে না। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে এখন থেকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন তারা।
বাজারে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা। মাঝারি মানের মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা ও সরু নাজির চাল ৭৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা, মিনিকেট ২ টাকা ও ভালো মানের নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। চিকন চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক সায়েম বলেন, আমনের নতুন চালের প্রভাব এখনো পড়েনি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। আরেক খুচরা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি থেকে বাজারে নতুন চাল এসেছে। পাইকারি বাজারে দাম না কমায় খুচরা পর্যায়ে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গত এক মাসে তিন দফা বেড়ে আটার দাম প্রতি কেজি ৭৫ টাকায় ঠেকেছে। বাজারে দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। খোলা আটা নিলে পাওয়া যাচ্ছে ৫-১০ টাকা কমে।
কাওরান বাজারের চাল বিক্রেতা হানিফ বলেন, আটা-ময়দার দাম বাড়ার প্রভাব চালেও পড়ছে। দরিদ্র মানুষ রুটি খাওয়া বাদ দিয়ে এখন ভাত খাচ্ছে। বাজারে আসা একজন পরিবহন শ্রমিক মানিক বললেন, যখন চালের কেজি ৫০ টাকা ছিল তখন ৩২ টাকায় এককেজি আটা কেনা যেতো। এখন লাগে ৬৫ টাকা। সেজন্য সকালে রুটি খাওয়া বন্ধ করেছেন তিনি।
এক বিক্রেতা বলেন, সরকার যে হারে চিনির দাম নির্ধারণ করেছে, সেই হারে আমরা পাইকারি পর্যায়েও কিনতে পারছি না। এতে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া তেল ও চিনির দাম। চিনির দাম বাড়ানোর পরও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। কোম্পানিগুলো প্যাকেট চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাজারে এর সংকট দেখা গেছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকা এবং চিনির দাম ১০৭ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। তবে চিনি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা আর ১৯০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে তেল।
ওদিকে চাহিদা কমায় কমেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। রাজধানীর পাইকারি বাজার ও খুচরা পর্যায়ের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পাইকারিতে প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিমের দাম ১১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা হালিপ্রতি ডিমের দাম রাখছেন এখন ৪০ টাকা। এতে প্রতি ডজনের দাম দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি এখন প্রতিকেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাবে কিছুটা কমেছে সোনালি মুরগির দামও। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগির দাম পড়ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২০ টাকা কম।
এ ছাড়া বাজারে শীতকালীন সবজি প্রচুর থাকলেও সে অনুযায়ী দাম কমেনি। খুচরা বাজারে পেঁপে ৩০ আর মুলা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন অন্য সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কেনাবেচা চলছে। কিছু সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে, যেগুলো গ্রীষ্মের। এরমধ্যে শিম, পটোলের তুলনায় অন্য সবজির দাম বেশি। পাকা বা আমদানি করা টমেটোর কেজি ১১০ থেকে ১২০, গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি পুরনো আলু ২৮ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, পটোল, ৫০, শসা ৮০-১০০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, ধনিয়াপাতা ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, ব্রকলি ৮০-১০০ টাকা ও পিয়াজ পাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা করে এবং লালশাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির খুচরা বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন অনেক সবজি। ফুলকপি-বাঁধাকপি থেকে শুরু করে সামনে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দাম আরও কমবে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, কিছুটা স্বস্তি মিললেও সবজির দাম আরও কমা উচিত। দেশে প্রচুর শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এরপরও কেন দাম আরও কমছে না, প্রশ্ন ক্রেতাদের।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে পুঁটি মাছ ২৫০ টাকা, বড় রুই মাছ ৪৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, টাকি মাছ ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা ৭০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১১০০ টাকা এবং এক কেজির কম ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে এখন প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। জিরা কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য মসলার দামও বেশ কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায়ও গরম মসলার মূল্যবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। টিসিবি বলেছে, বাজারে গত এক মাসে প্রতি কেজি জিরায় ৭ শতাংশ, দারুচিনিতে ১২ শতাংশ, লবঙ্গে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by