আন্তর্জাতিক

হিজবুল্লাহর তীব্র হামলা, হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরাচ্ছে ইসরায়েল

  প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২৩ , ৬:৫৩:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

হিজবুল্লাহর তীব্র হামলা, হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরাচ্ছে ইসরায়েল

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাসের সাথে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর তীব্র হামলার মুখে সীমান্ত এলাকার আরও হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উত্তর সীমান্ত উত্তপ্ত হওয়ায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল। রোববার নতুন করে উত্তর সীমান্তের আরও ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

উত্তর সীমান্ত এলাকার ২৮টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা লেবানন সীমান্ত লাগোয়া উত্তর ইসরায়েলের আরও ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার তালিকা তৈরি করেছে।

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকার ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত সপ্তাহে আরও ২৮টি বসতির লোকজনকে রাষ্ট্র-পরিচালিত অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সীমান্ত থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ অনেকের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলের উত্তরের কিরিয়াত এশমোনো শহরের মেয়রের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সীমান্ত থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের এই শহরের একজন নারী মেয়রের সামনে চিৎকার করে বলেন, তাকে তেল আবিবে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। কিন্তু তার গ্রামের চেয়ে তেল আবিব নিরাপদ হবে বলে মনে করেন না তিনি।

রাজধানীর উদ্দেশে বাসে যাত্রা শুরুর আগে ওই নারী বলেন, ‘বিবি (প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু) আমি এত বছর ধরে আপনাকে ভোট দিয়েছি। কিন্তু আপনার এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আমার পাঁচ সন্তান এখানে নিরাপদ নয়।’

গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। শনিবার উত্তর ইসরায়েল সীমান্তে লড়াইয়ের সময় হিজবুল্লাহর অন্তত ৬ সদস্যের প্রাণহানি ঘটে।  

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলি সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এখন পর্যন্ত চলমান এই উত্তেজনা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে রোববার গোষ্ঠীটির নেতা হাসান ফাদলাল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহ প্রধান সীমান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং লড়াইয়ে কমান্ডারদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লাহর বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছেন। এর মধ্যে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ স্থানও রয়েছে। তবে লেবাননের কোন এলাকায় এই হামলা চালানো হয়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি ইসরায়েল।

পরবর্তীতে ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তিনটি দলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করেছে। হিজবুল্লাহর এই যোদ্ধারা সীমান্তের ওপারে সাজোয়াঁ যান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

হিজবুল্লাহ-পরিচালিত আল-মানার টেলিভিশন চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননের আলমা শাব শহর ও এর আশপাশের এলাকায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালিয়েছে। লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের আইতারুনের পাশে শহরটির অবস্থান।

ইসরায়েলের কিরিয়াত এশমোনা শহরের উল্টো পাশে লেবাননের হুলা শহরের আশপাশের এলাকাও ইসরায়েলি বোমা হামলার সম্মুখীন হয়েছে বলে আল-মানার জানিয়েছে। সম্প্রতি উত্তর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে লেবাননের হুলা জেলা।

গত ৭ অক্টোবর সীমান্তে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে হিজবুল্লাহর ১৯ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে শনিবার জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী। ইসরায়েলি বাহিনীর বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ানো ঠেকানোর কৌশল হিসেবে সংঘাতে ব্যস্ত রাখার লক্ষ্যে হিজবুল্লাহ সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। ইসরায়েলও বলেছে, হিজবুল্লাহর সাথে তাদের যুদ্ধে জড়ানোর কোনও আগ্রহ নেই। হিজবুল্লাহ সংযত থাকলে সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ওই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ নিয়ে আরব বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা শুরু করলে ওই অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে পুরোদমে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by