রংপুর

উলিপুরে তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা ঝুঁকিতে

  প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:১৪:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা ঝুঁকিতে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বোরো রোপণের চলছে মহা উৎসব। তীব্র শীতে কিছু কিছু বোরোর বীজতলা ঝুঁকিতে থাকায় চিন্তিত কৃষকেরা। তবে শীতের তীব্রতার কারণে ধান রোপনে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে শুরু করে দিনভর মাঠে চলছে কৃষকদের মহা ব্যস্ততা। জমিতে পানি সেচ, হালচাষ, বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ সব কিছু মিলে একেবারে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। উপজেলায় বেশিরভাগ কৃষক এরই মধ্যে শেষ করেছেন জমি হালচাষ।

কৃষকরা জানান, পৌষ মাসের শেষের দিকে বোরো ধান রোপণের কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার ধান রোপণ মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড শীত সেই সাথে ঘনকুয়াশার কারণে পানির মধ্যে মাঠে নেমে ধান রোপণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সে কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন কৃষকেরা পুরো দমে চালাচ্ছে চারা রোপণের কাজ। এছাড়া তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা শীত ও কুয়াশার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও ভালো ফল পাচ্ছেন না। প্রকৃতির এ রূপ দীর্ঘ সময় থাকলে এবার উপজেলায় বোরোর চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় বোরো রোপণের লক্ষ্য মাত্রা ২২ হাজার ৫ ‘শ ১০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৮ হাজার ২০৫ হেক্টর, উপসী ১৪ হাজার ১৬৫ হেক্টর ও স্থানীয়জাত ১৪০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১০.৬৪ মেট্রিকটন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী রয়েছে। প্রদর্শনী প্রতি কৃষককে প্রণোদনা হিসাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বোরো ধানের উফশী ও হাইব্রিড জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও বোরো রোপণ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে জমির কাদা পানিতে নেমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানের চারা রোপণ করছেন চাষিরা। কেউ চারা রোপণ উপযোগী জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত। আবার কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন। এ যেন বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কৃষকদের এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, টানা শীত আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এবার চারা নিয়ে শঙ্কিত কৃষকেরা। বোরোর বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন করে আবারও বীজতলা তৈরি করতে হবে।উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী খন্দকার জানান, এবারে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ শুরু হয়েছে। রাতদিন পরিশ্রম করে আবাদ করি।

চারা রোপণের পর থেকে নিয়মিত পরিচর্যাও করতে হয়। তেল-সার ও বীজের দাম বৃদ্ধিতে খরচ ও বেশি হচ্ছে। তারপরও যদি ন্যায্য দাম না পাই তাহলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই সরকারের কাছে বোরো আবাদে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন তিনি। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ১৭-২৫ মণ ধান হবে। দাম ভালো বেশি হলে সকল খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে বলে জানান তিনি।

বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়া কিশোরপুর এলাকার মোস্তাফিজার রহমান জানান, এবারে ২ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করার আশায় ৮ শতক জমিতে বীজতলা দিয়েছিলাম। তীব্র শীতের কারণে বীজতলা পুড়ে গেছে। এখন আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। এখন বোরো চারা কিনে জমি আবাদ করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এ ক্ষতি কি ভাবে পুষিয়ে উঠব উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বোরো ধান চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রণোদনার আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে বিনা মূল্যে বোরো ধানের উফশী ও হাইব্রিড জাতের বীজ, সার বিতরণ করছি। বীজতলার চারা নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এবছর উপজেলায় ১ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে যা দিয়ে ২৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা যাবে।

তিনি আরও জানান ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রা বীজতলার জন্য ক্ষতিকর। বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা কৃষকদের বীজতলা পলিথিনে ঢেকে দেওয়া, পানিতে ডুবিয়ে রাখা,সালফারযুক্ত ওষুধ ছিটানো, জিপসাম ও ইউরিয়া সার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

Powered by