বাংলাদেশ

কতটা ভয়াবহ হতে পারে ‘আমফান’?

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২০ , ১২:১১:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে চলছে। রোববার দুপুরে এটি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এটি সাগরের উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘন্টায় এর গতি গড়ে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। আগামী ২০ মে শেষ রাতে বা ২১ মে সকালে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, সাগরে অবস্থানকালে ঘূর্ণিঝড় গতিপথ পরিবর্তন করে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে এটি বেশ দূরে অবস্থিত। এ কারণে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত গোটা উপকূলই এর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আমফান কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়। ঘরবাড়ি, গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।

তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার ওপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াজেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি হয়তো দেশের উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে।

তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটারের বেশি থাকলে তাকে বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড় বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরণের ক্ষতি হয়। একটা হচ্ছে প্রাণহানি। আরেকটা হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি।

অতীতের বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা কমে গেছে।

১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় একই ধরণের আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ছিল ২০০৭ সালে সিডর। সেখানে মানুষের মৃত্যু হার তুলনামূলক কম ছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৩ হাজার ৪০৬ জন মারা গিয়েছিল।

এরপরে বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫শে মে আইলার আঘাতে মারা যায় ১৯০জন। ২০১৩ সালে মহাসেনে মারা যায় ১৮ জন।

“এর পরে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই দুই সংখ্যার বেশি হয়নি এবং সেটি ২৫ এর উপরে যায়নি,” বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক।

অন্য দিকে আমফানে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকলে বাড়িঘর এবং গাছপালা পড়ে যাবে এবং এতেও ক্ষতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০-৭০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে।

কী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে?

ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে প্রস্তুতি হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং সিপিসি এর মধ্যে এর আগেই বৈঠক হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা। তবে এবার যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কোভিড-১৯ এর কারণে, সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হবে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কে কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে, প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবহার করা হবে এবং বাড়ির কাছে থাকা স্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন যারা দুর্যোগের সময়ে কাজ করেন।

পরবর্তীতে বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হলে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে। সেখানে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পানীয় জলের ব্যবস্থা এগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান সিনিয়র সচিব।

“এখন প্রিপারেশন স্টেজে আছি, পরে এক্সিকিউশনে যাবো, পরবর্তী সিগনালের অপেক্ষায় আছি,” বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইক্লোন শেল্টারে যারাই আসুক তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করার মতো ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by