দেশজুড়ে

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক এখন ফল বিক্রেতা

  প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২১ , ৪:২১:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক এখন ফল বিক্রেতা

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

রাজধানীর মিরপুরের ‘সান ওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রধান মো. মনোয়ার মারা যান ২০২০ সালের ৩ জুন। বকেয়া বাড়িভাড়া দেড় লাখ টাকা পরিশোধ না করতে পারায় মানসিক চাপে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান স্ত্রী তানিয়া সুলতানা। স্বামী হারিয়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্কুলেই বসবাস শুরু করেছেন তিনি। বকেয়া পরিশোধ তো দূরের কথা এখন আর নিয়মিত বাড়িভাড়াও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। বাড়ির মালিক তাকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

কদিন আগে ভোরের দর্পণের কাছে তার দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন তানিয়া সুলতানা। শুধু তানিয়া সুলতানা এমন বিপদে আছেন তা নয়, এরকম অনেকে রয়েছেন যারা বাড়িভাড়া শোধ করতে না পেরে পুরো বিদ্যালয়ই বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আশায় রয়েছেন শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হতে পারে। তখন হয়তো কোনও একটা ব্যবস্থা করে বিদ্যালয় আবার শুরু করা যাবে। স্কুল চালানোর ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িও ছাড়তে পারছেন না। এ এক উভয় সংকট।

এই পরিস্থিতিতে কিন্ডারগার্টেনের কর্মচারিদের অনেকে বদলে ফেলেছেন পেশা। বেছে নিয়েছেন ফল বিক্রি, নৌকা চালনা, অটো চালনা কিংবা বিস্কুট বিক্রির পেশা। তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘করোনার কারণে সান ওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বন্ধ হওয়ায় দেড়লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে। আমার স্বামী গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগিতে যান টাকা সংগ্রহে। সেখানে টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। গত বছর ৩ জুন স্ট্রোক করে মারা যান। এরপর দুইটি সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটচ্ছি। বাড়িভাড়া দিতে পারছি না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছে।’ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনায় এক বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোর ৬০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে সারাদেশের ৪৯টি কিন্ডারগার্টেন। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে আরও চারটি কিন্ডারগার্টেনের।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ‘দেশের ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে লেখা পড়া করে প্রায় ৭৫ লাখ ছাত্রছাত্রী। এতে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ৬ লাখ। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ড্রপ আউট হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। যেসব প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের মাত্র ১০ শতাংশ অনলাইনে অংশ নিচ্ছে।’ মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন আরও বলেন, ‘ভাড়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ২০ ভাগ শিক্ষা উদ্যোক্তা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও আত্মসম্মানের কথা ভেবে গোপন রাখছেন। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে আরও প্রায় ১২ হাজার কিন্ডারগার্টেন। সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ড্রপ আউট হয়েছে ৩০- ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। অনলাইনে অংশগ্রহণ করছে মাত্র ১০ শতাংশ।’ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে না পেরে মানসিক চাপে মারা গেছেন তিন জন স্কুলপ্রধান।

এদের মধ্যে সান ওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলপ্রধান মো. মনোয়ার স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এছাড়া কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্যারাগন কিন্ডারগার্টেনের রওশন কবীর এবং ব্রহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আলোকান্দি বিদ্যাপিঠের আব্দুল খালেক আত্মহত্যা করেছেন। তথ্যমতে, পুরাপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ৪৯টি কিন্ডারগার্টেন। বন্ধের উপক্রম হয়েছে বাড্ডা এলাকার টাইনি টটস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুরাইনের আলমবাগ কিন্ডারগার্টেন এবং গাবতলীর ইউ এন এ মডেল স্কুল এবং মডার্ন একাডেমীসহ চার প্রতিষ্ঠান।

বিক্রির তালিকায় রয়েছে ৮টি কিন্ডারগার্টেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার ফুঁলকুড়ি কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাই স্কুল, সাভারের বাইপাল এলাকার সৃজন সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজধানীর কচুক্ষেত মাটিকাটা এলাকার আইডিয়াল পাবলিক স্কুল, রামপুরার উলন রোডের হলি ভিশন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বসিলার রাজধানী আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারের পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রাজধানীর রামপুরার ইকরা কিন্ডারগার্টেন, কচুক্ষেত মাটিকাটা এলাকার ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by