ঢাকা

কেরাণীগঞ্জে রাসেল হত্যার আব্বা বাহিনীর মূল হোতা রাব্বিসহ গ্রেফতার ১২

  প্রতিনিধি ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:৪২:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

কেরাণীগঞ্জে রাসেল হত্যার আব্বা বাহিনীর মূল হোতা রাব্বিসহ গ্রেফতার ১২

কেরানীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর রাসেল হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশ। হত্যাকান্ডের সপ্তাহ পেরুতে না পেরুতেইএজাহার নামীয় ১৩ আসামীর মূল হোতা রাব্বিসহ ১২ জনকেই গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ। আজ ১৭ জানুয়ারি বুধবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় পুলিশ।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, চাঞ্চল্যকর ও ব্যাপক আলোচিত এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পিপিএম-বার এবং সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম,এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত টিম বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীদের সনাক্ত করে।

পরবর্তীতে কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) মাহাবুব আলম এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূল হোতা আফতাব উদ্দিন রাব্বি (৩২), সজীব (৩৬), রাজীব (৩৫), হীরা (৩০), এবং ফিরোজ (৩১)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ভোলা জেলার লালমোহন থানায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আসামী আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), আমির (৩৮), রনি (৩৫), দেলোয়ার ওরফে দেলু (৩৭), শিপন (৩১), মাহফুজ (৩৬) ও মোঃ রতন শেখ (২৮)সহ সর্বমোট ১২ জন আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে আসামীরা জানায়, নিহত রাসেল ও মামলার ১নং আসামী আফতাব উদ্দিন রাব্বি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। সে রাব্বির হয়ে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের কালিগঞ্জ ও তার আসপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে রাব্বির নামে চাঁদা আদায় করত। কিন্তু রাসেল সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করত। মূলত: এই আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে পারস্পারিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য রাব্বি লোকজন দিয়ে রাসেলকে তার তেলঘাটস্থ পারভীন টাৗযারের অফিসে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর উক্ত অফিস রুমে রাব্বি ও তার সহযোগীরা মিলে রাতভর রাসেলের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় । নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল তার বন্ধু রাব্বিকে ‘আব্বা আব্বা’ বলে ডাকে ও বাঁচার জন্য আকতি মিনতি করলেও তাকে কোন রকম ছাড় দেননি রাব্বিচক্ররা। সবাই মিলে পালাক্রমে মারার একপর্যায়ে রাসেল গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে রাব্বির লোকজন আহত রাসেলকে অচেতন অবস্থায় রাত ০২ ঘটিকার দিকে তার বাসায় স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে তার স্বজনরা রাসেলকে মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এ ঘটনার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের একাধিক ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিকে ১ নম্বর আসামী করে ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by