দেশজুড়ে

গৌরীপুরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ১৮ আগস্ট ২০২১ , ৬:১৩:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে শালীহর গ্রামে মোতালেব বেগ দাখিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ছাদ ঢালাইসহ অন্যান্য কাজ করছেন।
জানা যায়, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর গ্রামে এ মোতালেব বেগ দাখিল মাদ্রাসার চারতলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ ৮০ দিন বন্ধ থাকার পর এ মাসে কাজ চলছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি এবং করোনাকালীন তারা দায়সারাভাবে কাজ করছে। সরকার কর্তৃক মাদ্রাসা খুলে গেলে ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসার ভৌত-অবকাঠামো সমস্যার জন্যে নানা সমস্যা পোহাতে হবে শিক্ষার্থীদের। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার তেমন কোনো ভালো শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের আওতায় উক্ত মাদ্রাসার চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। যা পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ পান মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিক লাভের আশায় সংশ্লিষ্ট অ্যাস্টিমেট ডিজাইন অনুযায়ী কাজ না করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানায়, মাদ্রাসার একতলা ভবনের ছাদ ঢালাই ও ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লাযুক্ত নিন্ম মানের বালু, ২/৩ নম্বর ইটের সুড়কি পাউডার যুক্ত ও কম দামের মীর নামীয় সিমেন্ট। তাছাড়া  গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের এম-১৫ (এম-ফিফটিন) মিডিয়া গ্রুপকে অবগত করার জন্য ক্লাবের নিজস্ব ফেইস বুক আইডিতে ছবিগুলো আপলোড করে তা জানানো হয়েছে।
এছাড়া, কোনো প্রকৌশলী কিংবা কোনো প্রতিনিধি মাসের পর মাস উপস্থিত না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজের সুযোগ পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এ মোতালেব বেগ গত সোমবার বিকালে (১৬ আগস্ট ২০২১) বলেন, ‘ভবন নির্মাণের কোনো ভালো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদার তার পছন্দমতো কাজ করছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না তিনি। নিরুপায় হয়ে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নিকট আবেদন করেন এ মাদ্রাসার তত্ত্ববধায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক। আবেদনে এ দাখিল মাদ্রাসার ৪তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ অদ্যাবধি শুরু না করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কথা উল্লেখ ছিলো। ১৮/০৮/২০১৯ এর কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অদ্যাবধি নির্মাণ কাজ শুরু করেননি। পরবর্তীতে মহোদয়ের কার্যালয় হতে স্মারক নং-নিঃ প্রঃ(এম)/ইইডি-২৫৫৬, তারিখ ঃ ০৯-০৭-২০২০ খ্রিঃ মূলে পত্র প্রাপ্তির ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার উপরোক্ত নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতঃ প্রায় সাড়ে ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও অদ্যাবধি নির্মাণ কাজ শুরু করেননি বা শুরু করার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না ওই সময়ে। তিনি আরও বলেন, অবশেষে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির সময়সীমার ৪৮০ দিন চলে যাওয়ার পর মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বর্তমান কার্যাদেশের ২ বছর পরিপূর্ণ হয়েছে এবং ভবন নির্মাণ কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। তাছাড়া ৪তলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই দেয়ার পর দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ৮০ দিন পর। এভাবে চলতে থাকলে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হতে ৪ বছর লেগে যাবে।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা সাহেবকে মুঠো ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ’মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি)’ মাদ্রাসার পূর্নাঙ্গ ভবন নির্মাণের আরও এক বছর সময় বাড়ানো জন্য একটি আবেদন করেন, যা এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৮/০৮/২০১৯ এর কার্যাদেশ অনুযায়ী ভবনের কাজ চলছে। এখনো ৭০ ভাগ কাজ বাকি আছে। এভাবে কাজ চলতে থাকলে আরো ২-৩ বছর সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় তার জন্য জেলা ও উপজেলার মাসিক সভায় উত্থাপন করা হবে।
১৭ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার রাত দশটায় ভবন নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি) এর স্বত্ত্বাধিকারী হাফেজ মো. আজিজুল হক মুঠো ফোনে রিপোর্টার্স ক্লাবকে বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। তবে তিনি আরো বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয় বিধায় ভবনের মালামাল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। কিছুদিন কাজ করার পর আবার কাজ স্থগিত হতে পারে বলে তিনি জানান। এদিকে এম-১৫ (এম-ফিফটিন) মিডিয়া গ্রুপের ১০জন সাংবাদিকদের সরেজমিনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গৌরীপুর থেকে শালীহর মাদরাসার কাছাকাছি যে রাস্তা রয়েছে তার মধ্যে ৯৫ ভাগ রাস্তাই পাকা। এতে মালামাল পরিবহন ও চলাচলের কোনো বিঘ্ন ঘটার কথা নয়।  সরেজমিনে দেখা যায় ভবনের ৭০ ভাগ অংশের কাজ এখনও বাকী রয়ে গেছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by