বাংলাদেশ

ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনে টাকা ছাপাতেও পারে সরকার!

  প্রতিনিধি ৬ জুন ২০২০ , ১১:০০:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার। যেখানে করোনা মহামারি সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেশখানিকটা বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এরপরও বাজেট ঘাটতি থাকবে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৭ শতাংশের মত। গত শতাব্দী ৯০ এর দশক থেকে বাজেট ঘাটতির গোল্ডেন ফাইভ রুল ফলো করা হচ্ছিল (বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের কাছাকাছি রাখা), যা এবারই পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে এর চেয়ে অনেক বেশি বাজেট ঘাটতি দেখা যায়।

উন্নয়নশীল দেশের ৮ থেকে ১০ শতাংশ পযন্ত বাজেট ঘাটতিকে বড় সমস্যা হিসেবে না দেখলেও এবারের ঘাটতি হয়তো অর্থবছর শেষে ছাড়িয়ে যাবে লক্ষ্যমাত্রাও। এর বহুবিধ কারণ অনুমান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে রাজস্ব আহরণের এত বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। তার যুক্তিও আছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোগ ব্যয় কমবে, কমবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা আমদানি-রফতানির গতিও। তাহলে বলাই যায় রাজস্ব আহরণের খাত সবগুলোই সংকুচিত হবে করোনার নেতিবাচক প্রভাবে।

এ অবস্থায় সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি সহায়তা ও ঝণের পাশাপাশি অন্যতম ভরসা দেশের ব্যাংকখাত ও সঞ্চয়পত্র। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে অর্থনীতিবিদদের। অনেকটা স্থবির অর্থনীতিতে জনগণের সঞ্চয়ের সক্ষমতাও কমবে বলে মত তাদের। এদিকে ব্যাংক খাত থেকে ঝণ পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। কেননা সরকার অর্থনীতি গতিশীল করতে করোনায় যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার সিংহভাগের জোগান দাতা ব্যাংক খাত। ঝণ হিসেবেই ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সুদে ঝণ দিবে ছোট, বড় উদ্যোক্তা ও কৃষকদের। তাই আবারো বাজেটে টাকার জোগান দেয়ার মত ব্যাংকখাতের আথিক শক্তি নিয়ে সংশয় অযৌক্তিক নয়। তাহলে বিকল্প উপায় কী হতে পারে?

কোনো একটি উপায় নিয়ে না ভেবে সমন্বিত কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদের। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম যেহেতু কমেছে তাই কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দাম কমিয়ে ভর্তুকি সংকোচন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন টাকা ছেপে সরকারকে ঝণ দিতে পারে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পুঞ্জিভূত অর্থ নিয়ে কাজে লাগাতে পারে। টাকা ছাপার মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন টাকা ঢুকলে মূদ্রাস্ফীতির কারণে ভোগ্য বা অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার ঝুঁকি অন্যসময়ে থাকলেও এখন তা কম বলে মত তার। কারণ মানুষ প্রয়োজন বুঝেই করোনাকালে খরচ করছে। তবে বিভিন্ন পরিকল্পনায় সংস্থান হওয়া অর্থের সদ্ব্যবহারের গুরুত্বও তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ। তার মতে অপচয় কমিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থের ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ভারত সরকারকে টাকা ছাপিয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব নাগরিকের ব্যাংক হিসাবে নগদ টাকা পৌঁছে দেয়ার পরামর্শ দেন। তাই অর্থনীতির প্রয়োজনে টাকা ছাপানোর পথেও হয়তো যেতে পারে বাংলাদেশের সরকার।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by