দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তান্ডবে নষ্ট হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকার শুঁটকি

  প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:৫৮:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তান্ডবে নষ্ট হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকার শুঁটকি

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মাছ শুকানোর চাতাল, মাচা এবং আড়ায় থাকা কাচা ও আংশিক শুঁকনা মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কুইন্টাল মাছ। এতে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা।
এছাড়া ঝড়ের তান্ডবে শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের পাঁচ শতাধিক জেলেঘর, দুই শতাধিক শুঁটকি সংরক্ষণের ঘর ও আলোরকোলের শতাধিক দোকানির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মালামাল মিলিয়ে আরও ক্ষতি হয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার। এই ঝড়ে যে পরিমান শুঁটকি নষ্ট হয়েছে তাতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শুঁটকি পল্লীর সিও এবং ক্ষতিগ্রস্ত শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাঝের কিল্লার সবচেয়ে বড় শুঁটকি ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের জাহিদ হোসেন বহদ্দার জানান, এবার সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছিল। কিন্তু তাদের কপাল খারাপ। মুহুর্তের মধ্যে ঝড়ে তাদের সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গেছে। মাচা, চাতাল ও আড়ায় শুঁকাতে দেওয়া সব মাছ ভেসে গেছে। তার প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আলোরকোলের ব্যবসায়ী রামপালের আ. রাজ্জাক ও আবু তাহের জানান, তাদের একেক জনের প্রায় কোটি টাকার কাচা মাছ ও শুঁটকি নষ্ট হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে দুর্যোগে পড়ে তারা নিস্ব হয়ে গেছেন।
আলোরকোল শুঁটকি পল্লী থেকে বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ মজুমদার মুঠোফোনে জানান, ঝড়ে মাচা ও আড়ায় থাকা সমস্ত মাছ কাগজের মতো উড়িয়ে নিয়ে গেছে। পুরো শুঁটকি পল্লী যেনো ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। তবে দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরে ধ্বংসস্তুপ থেকে মালামাল কুড়িয়ে নতুন করে ঘর, মাচা, চাতাল ও আড়া তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। পাহাড় সমান ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়নোর চেষ্টা করছেন তারা।
দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শুঁটকি পল্লীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিও) মো. খলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, শনিবার সকালে শুঁটকি উৎপাদনকারী মাঝের কিল্লা, আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া, শেলার চরসহ চারটি চর পরিদর্শন করেছি। সব চরেই ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাচা, চাতাল ও আড়ায় থাকা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কুইন্টাল মাছ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। ঢেকে রাখা আংশিক শুঁকনা মাছে পানি লেগে পোকায় ধরেছে। এদিয়ে আর শুঁটকি হবে না।
সিও মো. খলিলুর রহমান বলেন, ঝড়ের আগে সমুদ্র থেকে ধরে আনা বহু তাজা মাছ সাগরে ফেলে দিয়েছেন জেলেরা। তার সঠিক হিসাব নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে শুঁটকি মৌসুমের প্রথম ঝড়ে মহা বিপর্যয় নেমে আসে শুঁটকি পল্লীতে। কাচা মাছ, শুঁটকি ও অন্যান্য মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকার। নষ্ট হওয়া মাছ থেকে যে পরিমান শুঁটকি পাওয়া যেতো তাতে আমাদের (সরকারের) রাজস্ব হতো ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাগরে এবার প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। সামনে বড় ধরণের কোনো দুর্যোগ না হলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন মহাজনরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by