বরিশাল

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব: পূর্ণিমার জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বরগুনার অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

  প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২১ , ৮:৪৯:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সোহরাব, বরগুনা:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক রয়েছে উপক‚লের লাখ মানুষের মাঝে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে একাধিক বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে জেলা-উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ। দুই দিনের জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে শত-শত মাছের ঘের, পানের বরজ, রবি শস্য, গাছপালা, বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত শতাধিক কাঁচা বসতবাড়ি, প্লাবিত হওয়ার ফলে রান্না হয়নি উপক‚লের একাধিক পরিবারগুলোতে। অতিরিক্ত পানির চাপ ও প্রচন্ড বাতাসে লন্ডভন্ড হয়েছে বরগুনা জেলা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা।

আশ্রয় নিতে আসা মানুষের মাঝে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সামিয়া, সহকারী কমিশনার ভূমি নিজামুদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ ইলিয়াস আহমেদ স্বপন, ঢলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুহেনা মোস্তফা টিটু।

 

এছাড়াও ঘূর্নিঝড় ‘ইয়াসে’ বরগুনার আমতলী পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্থ পানি বন্দিদের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করেছেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান। জেলার ছয়টি উপজেলায় একটি করে মেডিকেল টিম কাজ করেছে।

 

খোলা ছিল তিনটি কন্ট্রোল রুম। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সম্ভাব্য ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জরুরী মেরামতের জন্য এই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় নগদ এক কোটি ৩১ লাখ টাকা, খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩৫৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখা হয়েছিল জানান, বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।

 

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে জেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। স্বল্প উচ্চতার বেড়িবাঁধের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নাজুক বাঁধের কারণে এসব এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। উঁচু জোয়ারে কারণে বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী, মাঝের চর, ফুলঝুড়ি বাজার কুমরাখালী কাটাখালী, ডেমা, বাওয়ালকর, ঢলুয়া ইউনিয়ন, বাইনচটকি, বড়ইতলা ও পুরাকাটা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে সদরের ফুলঝুড়ি পাতাকাটা ও বাওয়ালকর এলাকা ঘুরে দেখা দেছে, ভেরিবাধ ছুটে এসব এলাকার নদীতীরের লোকালয় সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। পাথরঘাটা পূর্ব রুপদোন এলাকার বাসিন্দারা ও কাকচিড়া ইউনিয়নের মাঝেরচর এলাকার রিয়াজ হোসেন বলেন, এই এলাকায় জোয়ারের চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে বসবাসের ঘরটিও ধসে গেছে।

 

বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ ইলিয়াস আহমেদ স্বপন বলেন, বেশি ক্ষতি হয়েছে ইউনিয়নের চারটি জায়গা থেকে বেরি বাধ ভেঙ্গে এতে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বদরখালী ইউনিয়ন, তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং সাইক্লোন শেল্টার ও বøকের দাবি জানান। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে জেলার ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ বিষয়ে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। উঁচু জোয়ারের কারণে এসব বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া উঁচু জোয়ারের কারণে বাঁধের বাইরের এলাকাগুলোও প্লাবিত হয়েছে।

Powered by