Uncategorized

ঠাকুরগাঁওয়ে দাম বেড়েছে কাঠালের

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২১ , ৭:৪০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

আসাদুজ্জামান শামিম, ঠাকুরগাঁও :

ঠাকুরগাঁওয়ে এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ফলন অনেক বেশি হলেও সাম্প্রতিক লকডাউন ও বিধিনিষেধে বিক্রি কম হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়িরা বিপাকে পরেন। সে অবস্থার পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে কাঠাল ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে কিছুটা হলেও লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়িরা।

জেলার বিভিন্ন স্থানে কাঁঠালের স্তুপ করে রেখে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে বিক্রির দৃশ্য হরহামেশায় দেখা যাচ্ছে। ফলে পাইকার ও ব্যবসায়িরা তাদের পুঁজি নিয়ে শঙ্কার বিপরীতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন।

অপরদিকে কাঁঠাল বাগান মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

এর ফলে ফলন বেশি হলেও অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে কাঁঠাল। গত বছর ঠাকুরগাঁওয়ে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়, চাহিদা অনুযায়ী কাঁঠাল বিক্রিও হয় ভাল। এতে করে ব্যবাসায়ি ও আড়ৎদারগণ পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁঠাল কিনে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশেও রপ্তানি করে। ওই সময় জেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও রাস্তাঘাটে কাঁঠালের হাট বসলেও সম্প্রতি করোনার কারণে সেভাবে হাট বসতে দেখা যায়নি। তবে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে কাঁঠালের হাট বসছে এবং কাঁঠাল ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহও হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার সালন্দর চৌধুরী হাটে গিয়ে দেখা যায়, কমিশন ভিত্তিতে সুজন আলী নামে এক যুবক ভ্যানগাড়িতে করে কাঁঠাল এনে রাস্তার ধারে জমা করছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী সিংগিয়া গ্রামেই আমার বাড়ি। প্রতিদিন ব্যবসায়িদের প্রতি পিস কাঠাল ৩-৫ টাকা কমিশনে ট্রাকের সামনে এনে দেই। এতে করে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬শ টাকা আয় হয়। আজকে সাড়ে ৩শ পিস কাঁঠাল কিনে একানে এনে দিয়েছি।

একই এলাকার ব্যবসায়ি শাহ্ আলী বলেন, প্রতিদিন প্রতি পিস কাঁঠাল গড়ে ৩০-৪০ টাকায় কিনছি। প্রতিদিন গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁঠাল কিনে সালন্দর চৌধুরী হাট রাস্তার পাশেই স্তুপ করে জমাই।

পরে সেখানে ট্রাক ভিড়িয়ে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করি। কিছুদিন কাঁঠালের দাম না থাকায় ও লকডাউন এবং বিধিনিষেধ থাকায় কাঁঠাল পাঠাতে পারিনি। বর্তমানে অল্প অল্প করে কাঁঠালের দাম ও বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। আশা করছি এই ট্রাকের কাঁঠাল বিক্রি হলে ৫-৭ হাজার টাকা লাভ হতে পারে। সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ী গ্রামের কৃষখ আশরাফুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি ও বাগানে প্রায় ৩৭টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সেগুলো থেকে প্রত্যেক বছর তিনি ২০-২৫ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেন। এ বছর কাঁঠালের ফলন অনেক ভাল হলেও করোনার কারণে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় এ পর্যন্ত তেমন কাঁঠাল বিক্রি করতে পারেননি। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে কাঁঠাল কেনার জন্য পাইকাররা আসছেন এবং ভাল দামও বলছেন বলে জানান তিনি।

জেলার বেশ কয়েকজন কাঁঠাল পাইকার-ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেক বছর তারা গাছে কাঁঠাল ছোট থাকাকালীন চুক্তিভিত্তিক বাগান কিনে থাকেন। পরে বেশি দামে তা বাজারে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। কিন্তু এ বছর দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়ৎদাররা কাঁঠাল কিনতে অনিহা প্রকাশ করায় আর্থিক দিক থেকে লোকশানের শঙ্কায় ছিলেন তারা। অবশেষে নতুন করে কাঁঠালের দাম বাড়ায় আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, এ বছর জেলায় ১৫৭ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। দিন দিন জেলায় কাঁঠালের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি কাঁঠাল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলন প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভাল হয়েছে। তবে করোনার কারণে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় কাঁঠাল কেনা-বেচায় একটু সমস্যা থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা ভাল হওয়ায় কাঁঠালের দাম বেড়েছে। এতে করে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কৃষক, পাইকার ও ব্যবসায়িগণ।

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by