রাজধানী

তাদের কারণে বছরে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার!

  প্রতিনিধি ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৯:২০:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আসামিরা।

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

রাজধানীর নিউ মার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী এলাকায় র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ ওই চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।

তিনি জানান, গতকাল বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের মূল হোতাসহ তিনজন ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির হলেন-মো. কাজী এম এম মাহামুদ ওরফে ছোটন (৩২), রাকিব হাসান (৩০) ও বাবর উদ্দিন (৩০)।

তিনি জানান, এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ১৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ৪১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ৩ হাজার ৪০০ পিস টেলিটক সিম, ৭ মিনি কম্পিউটার, তিনটি ওয়ারলেস রাউটার, পাঁচটি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, তিনটি ল্যাপটপ, একটি ল্যাপটপ কুলার, ১০টি বিভিন্ন চার্জার, ছয়টি ইউএসবি মডেম, ১২টি পাওয়ার ক্যাবল, ২৪টি কনসেল ক্যাবল, ৩টি থ্রি-প্ল্যাগ, ৪টি মাল্টিপ্ল্যাগ, একটি মাউস, ৪টি মোবাইল ও নগদ ২ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বিটিআরসির দেওয়া তথ্যমতে, উদ্ধারকৃত আলামতের আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গতকাল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর আভিযানিক দলটি জানতে পারে যে, রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট থানাধীন কাটাবন এলিফ্যান্ট রোড ২৭৮/৩ সরদার ভিলার দ্বিতীয় তলার তালহা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রাংশ বিক্রি করছে। এসব সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল এবং বিটিআরসি’র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উক্ত স্থান থেকে ৪টি সিম বক্স ডিভাইস ও দুটি মোবাইলসহ আসামি রাকিব হাসান (৩০) ও বাবর উদ্দিনকে (৩০) কে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এরপর ওই আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই দিন রাতে রাজধানীর তুরাগ থানার রমজান মার্কেট ভাবনারটেক শামসুল আলমের বাড়ির একটি তালা কক্ষ (যা চলমান ভিওআইপি কন্ট্রোলরুম) থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের অন্যতম সদস্য মো. কাজী এম এম মাহামুদ ছোটনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ওই কক্ষ হতে সংযোগ অবস্থায় ৬টি সিম বক্স ডিভাইস, ২০০টি জিএসএম এন্টেনা, ১ হাজার ৪৫৭ পিস টেলিটক সিম, ৩ মিনি কম্পিউটার, একটি ওয়ারলেস রাউটার, ৫টি বিভিন্ন চার্জার, দুটি ইউএসবি মডেম, ৫টি পাওয়ার ক্যাবল, ১০টি কনসেল ক্যাবল, একটি থ্রি-প্ল্যাগ, ২টি মাল্টিপ্ল্যাগ, ২টি মোবাইল ও নগদ ২ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মাহফুজুর রহমান জানান, পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত আসামি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী মো. কাজী এম এম মাহামুদ ছোটনের (৩২) দেওয়া তথ্যমতে আজ রাজধানীর শাহ আলী  থানার গোদারীঘাট বটতালা এলাকার ১/৩৩ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় নিজ ফ্লাট (যা তাহার ভিওআইপি ব্যবসার প্রধান কন্ট্রোল রুম) থেকে ৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ২১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ১ হাজার ৯৪৩পিস টেলিটক সিম, ৪ মিনি কম্পিউটার, ২টি ওয়ারলেস রাউটার, ৫টি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, ৩টি ল্যাপটপ, ১টি ল্যাপটপ কুলার, ৫ বিভিন্ন চার্জার, ৪টি ইউএসবি মডেম, ৭টি পাওয়ার ক্যাবল, ১৪টি কনসেল ক্যাবল, ২টি থ্রি-প্ল্যাগ, ২টি মাল্টিপ্ল্যাগ ও ১টি মাউস উদ্ধার করা হয়।

অভিযান পরিচালনার সময় বিটিআরসির কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি কর্মকার্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, উক্ত অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৬ লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে দেশে টার্মিনেট করা সম্ভব। এর ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বর্তমান আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব।

এই উদ্ধার অভিযানকে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী চক্র ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার অভিযান বলে জানিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের মূল হোতা ও ভিওআইপির যন্ত্রাংশ কেনা-বেচাকারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি’র ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by