খুলনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ( ঝিনাইদহ-৩)আওয়ামীলীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:১৪:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ( ঝিনাইদহ-৩)আওয়ামীলীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর কয়েক মাস। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন সমাবেশে ভোট চেয়ে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছেন। বসে নেই ঝিনাইদহ-৩ আসনের আওয়ামীগের দলীয় প্রার্থীরা। এ আসনটি ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত।

এখানে বর্তমান সরকারের এমপি শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এবং সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নবী নেওয়াজের পৃথক দুইটি অনুসারি রয়েছে। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এ নির্বাচনী এলাকার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর আওয়ামীলীগ যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী কর্মসূচী পালন করে থাকেন। তবে বিরোধী দল বিএনপিসহ ছোট ছোট দলের আন্দোলন এবং নির্বাচন নিয়ে এ আসনের ভোটারদের মধ্যে আলোচনার তীব্রতা বাড়ছে। তবে বসে নেই জামায়াতে ইসলামী। গোপনে গোপনে তারা তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে। মুলত এই আসনটি জামায়াত বিএনপির ঘাটি হিসেবে অনেকে জানেন। তবে গত ৩টি নির্বাচনে বিএনপির হাত থেকে আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এবার আওয়ামীলীগের বেশ ক’জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা, সাবেক এমপি মইনুদ্দিন মিয়াজির ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সচিব সালাউদ্দীন মিয়াজি এবং বর্তমান আওয়ামীলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, কোটচাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুননেছা মিকি।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি এবং মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান। এছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় মসলিশের সুরা সদস্য অধাপক মতিয়ার রহমান এবং জাতীয় পাটির থেকে আব্দুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ-৩ আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর দুই উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে কোটচাঁদপুরে এক পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়ন এবং মহেশপুরের একটি পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৮১ হাজার ৭৪৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৭৪ জন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জামায়াতের মোজাম্মেল হক, ৯১,৯৬ ও২০০১ সালে বিএনপির শহিদুল ইসলাম মাস্টার, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান চঞ্চল,২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নবী নেওয়াজ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে শফিকুল আজম খান চঞ্চল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

ঝিনাইদহ-৩ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮১ হাজার ৭২৮জন এবং মহিলা ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৫১ জন। মোট প্রার্থী ছিলো ৫জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের শফিকুল আজম খান চঞ্চল, জামায়াতের প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতিকে) মতিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সরোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টির কামরুজ্জামান স্বাধীন এবং ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর ইসমাইল হোসেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে পাশ করেন আওয়ামী লীগের নবী নেওয়াজ। তিনি পেয়েছিলেন ৪৬ হাজার ১০৫ ভোট। আর জাতীয় পার্টির কামরুজ্জামান স্বাধীন লাঙল প্রতিকে পেয়েছিলেন ১হাজার ৪৬৫ ভোট।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান চঞ্চল নৌকা প্রতিকে পাশ করেছিলেন। মোট ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি জামায়াতের মতিয়ার রহমান পেয়েছিলেন ৮১ হাজার ৭৩৯ ভোট। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাষ্টার নির্বাচিত হন। মোট ভোট পেয়েছিলেণ ১ লাখ ২৭ হাজার ০২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেণ আওয়ামী লীগের সাজ্জাতুজ জুম্মা। মোট ভোট পেয়েছিলেণ ৮৪ হাজার ২৮৯ ভোট। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম মাষ্টার নির্বাচিত হন। তিনি ভোট পেয়েছিলেণ ৬৫ হাজার ৭২৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দি ছিলেণ জামায়াতের এএসএম মোজাম্মেল হক। তিনি পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার ৪৫৮ ভোট। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম মাষ্টার ৬১৩৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম ছিলেণ জামায়াতে ইসলামীর এ এস এম মোজাম্মেল হক। তিনি পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৮৬১ ভোট।

ঝিনাইদহ-৩ আসন দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে এগারোটি নির্বাচনের প্রতিবারই ভারত সীমান্তবর্তি উপজেলা মহেশপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোটচাঁদপুর থেকে এখনো পর্যন্ত কোন প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেননি। ফলে বরাবরই উন্নয়নে পিছিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা।

এ আসনটিতে পরপর ৪ বার বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টার নির্বাচিত হলেও গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল আজম খান চঞ্চল নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। মোট ভোট ২,৭৩,১০৮ এর মধ্যে আওয়ামীলীগ দলীয় এই সাংসদ চঞ্চল পেয়েছিলেন ১,১৮,৩৭৫। বিএনপি থেকে বার বার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাষ্টার পেয়েছিলেন ৫৯০১৪। জামায়াতের অধ্যাপক মতিয়ার রহমান পেয়েছিলেন ৮১৭৩৯ ভোট। মুলত বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসন থেকে জামায়াত ও বিএনপি জোটগত ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে স্থানীয় জোটের অভ্যন্তরীন দ্বন্দের কারেন জামায়াত বিএনপি আলাদা আলাদা নির্বাচন করায় তাদের ভরাডুবি হয়। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ত্রাণের টিন, চাউল আত্মসাৎ, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠে। এমনকি বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মাটি খুড়ে ত্রাণের টিন উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। ২০০৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শহিদুল ইসলামের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রাম থেকে ত্রাণের টিন, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল, খেলাসহ বিপুল পরিমাণের ত্রাণ সামগ্রী উদ্ধার করে।

তবে বিএনপির সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম মাস্টারের সময়ে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ ব্যপক উন্নয়ন করে আলোচনায় আসেন। বর্তমান সকরারের একটানা তিন মেয়াদের দুইবার বর্তমান এমপি শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এবং একবার নবী নেওয়াজ নির্বচিত হন।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল জানান, সাংগঠনিক ও এমপি হিসেবে আগের কাজের মূল্যায়ন করা হলে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কাজের বিষয়ে শফিকুল আজম বলেন, সরকারি নানা বরাদ্দ দুই উপজেলাতেই সমানভাবে বণ্টন করা হয়েছে। জনকল্যাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজও সমানভাবে হয়েছে।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ জানান, ১০ম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে জনগণের পাশে থেকে তাদের উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলাম।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হিসাবে কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুরে আমার সময়ে সবথেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করে জানান, দল আমাকে আবার মনোনয়ন দিলে স্থানীয় ভোটাররা আবারো আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস করি।
বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা সাংগঠিনকভাবে মোকাবেলা করা হবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদকের দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের সাথে নিয়োমিত যোগাযোগ করে সমন্বয় করে থাকি। দেশের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দল প্রস্তুত আছে বলে জানান সাবেক এ সাংসদ।

কোটচাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুননেছা মিকি জানান, তিনি ঝিনাইদহ ৩ আসন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবার মনোনয়ন চাইবেন। নারি প্রার্থী হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে কোটচাদপুর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাপক কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিবেন বলেন আশাবাদি।উপজেলাা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি জানান, আমরা এখনি নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমরা এখনো নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে একটি সুষ্ঠ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলন করছি।

তবে দল যদি নির্বাচন করে আমি প্রার্থী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে অনেক বেশি ব্যবধান নির্বাচিত হব বলে আশা রাখি।
মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান জানান, আমি দির্ঘদিন দলের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের দ্বায়িত্বে আছি। তিনি জানান, কেন্দ্রের নিদের্শণা রয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে তারা অংশ নিবেন না। তবে নির্বাচনের পরিবেশ যদি হয় দল মনে করে তাহলে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন দিলে নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।

Powered by