আন্তর্জাতিক

পেঁয়াজের দাম নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট!

  প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২৪ , ১১:৪৫:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

পেঁয়াজের দাম নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট!
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়েছে উদারপন্থী বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি-ডিপিকে। ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি-পিপিপিকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়েছে তারা।

এবারের নির্বাচনে ডিপিকে’র সঙ্গে জোট বেধেছিল ছোট ছোট কয়েকটি বিরোধী দল।

তারা যৌথভাবে জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯২টিতে জিতেছে।

এবারের সাধারণ নির্বাচনকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওলের জন্য গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও, আরো তিন বছর মেয়াদ বাকি আছে তার।

ফলাফলের জেরে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী হান দুক-সু। দলের অন্যতম নেতা হান ডং-হুন সহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও পদ ছেড়েছেন।

ইউন এবং তার পিপল পাওয়ার পার্টি-পিপিপি’র জন্য বিপর্যয় নিয়ে এসেছে এই পরাজয়।

আইনসভায় বিরোধী দল ডিপিকে’র আধিপত্যের কারণে আগে থেকেই কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হতো পিপিপিকে।

এখন বুধবারের নির্বাচনে বিজয়ের ফলে ডিপিকে সংসদে দ্রুতগতিতে যেকোনো আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনে ছোট দলগুলোর ভূমিকাও লক্ষণীয়। ডিপিকে এবং পিপিপি দুই দলের কাছেই তাদের কদর রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসন প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়।

ছোট দলগুলোও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু আসন পেয়ে থাকে। এই আসনের জন্যই বড় দলগুলো তাদের সাথে রাখতে চায়।

ভোটারদের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই, এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল।

ফেব্রুয়ারি মাসে, কোরিয়ার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে একেকটি আপেলের দাম উঠেছিল সাত ডলার পর্যন্ত।

এতটা না হলেও সাধারণ মানুষ যেসব জায়গায় কেনাকাটা করেন সেখানেও ফলের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায়। নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস করতে থাকে মানুষগুলো।

প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তখন একটি খাদ্যপণ্যের বাজার পরিদর্শনে যান।

উদ্বেগ দূর করতে এমন পরিদর্শন কতটা কাজে আসবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন ছিলো সাধারণের মাঝে। স্প্রিং ওনিয়ন(বসন্তকালীন পেঁয়াজ)-এর দাম এতটা ‘রিজনেবল’(যৌক্তিক) দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, এক প্যাকেট বা এক আঁটি সবুজ পেঁয়াজের দাম ৮৭৫ ওন (দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা) হওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। ৮৭৫ দক্ষিণ কোরিয়ান ওন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭১ টাকার মতো।

পণ্যটি ছাড় দিয়ে এই দামে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভর্তুকি’র কারণে ওই ছাড়টুকু দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। নইলে, সাধারণত তিন থেকে চার হাজার ওনের মতো খরচ করতে হতো।

তার মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

সবুজ পেঁয়াজ নিয়ে বিক্ষোভে নামেন কৃষকরা। ডিপিকে’র নির্বাচনি সমাবেশেও পেঁয়াজকে ‘প্রপস্’ (উপকরণ) হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

তখন এক বিরোধী দলীয় নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, স্প্রিং ওনিয়নই প্রেসিডেন্টকে ধরাশায়ী করবে।

তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইউনের দল হেরে যাওয়ার পেছনে দ্রব্যমূল্য একটি মাত্র কারণ। তালিকাটা আরো দীর্ঘ।

ইউন নাগরিকদের কাছে বরাবরই অজনপ্রিয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে অল্প, ০.৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রতি জনসমর্থন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

গত মাসে, একটি জরিপে দেখা যায়, অর্ধেক অংশগ্রহণকারীই তার প্রতি অসন্তুষ্ট।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by