ঢাকা

আশুলিয়ায় কথিত ঠিকাদার জলিলের অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিড়িক

  প্রতিনিধি ১১ মার্চ ২০২৩ , ৩:৫৫:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

মশিউর রহমান, আশুলিয়া:

বারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে গ্যাসের ব্যাবহার। এর পেছনে রয়েছে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন আর সরকারি সম্পদ লুটের মাধ্যমে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে কোটিপতি। রাতের আঁধারে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ও দূস্কৃতকারির মদদে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে বাড়ছে দূর্ঘটনা। আর এভাবেই আশুলয়িার গোরাট, ইউসুফ মার্কেট, ধনাইদ, দিয়াখালী ও রংপুর মার্কেট এলাকায় রাতেই চলে অবৈধ গ্যাস সংযোগের হড়িকি।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের গোরাট, ইউসুফ মার্কেট, ধনাইদ ও রংপুর মার্কেট এলাকায় একটি বিশেষ জেলার পরিচয়ধারী ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কথিত ঠিকাদার জলিল মন্ডল বাড়ী প্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নগদ ও কিস্তির মাধ্যেমে গ্রহন করে  প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েক শতাধিক বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান , এখানে বারবার তিতাস অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান পরিচালনা করলেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবসায়ীরা এবং এলাকার চিহ্নিত গ্যাস চোরেরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। চলছে চোর পুলিশ খেলা। গ্যাস দালালরা গ্রাহকদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছেন এবং প্রচার করছেন তিতাসের উচ্ছেদ আভিযানের এসাইনমেন্ট শেষ, ফলে আপনারা আগামী ১বছর নির্বিঘ্নে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন এছাড়াও আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা বা কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা । 

ধনাইদ এলাকার সিগমা কারখানার দক্ষিন পাশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন এমন এক বাড়ির মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে তার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি  নিজেকে বাংলাদেশের বিশেষ জেলার লোক পরিচয় দিয়ে বলেন এখানে সবাই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে, আমি করলে দোষ কি? আর আমি যদি বেআইনী কাজ করি তাহলে আমার বিরুদ্ধে কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। আমাকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। যদি তথ্যর প্রয়োজন হয় অন্যান্য বাড়ি থেকে নেন।

একই এলাকার আরো এক বাড়ী মালিক বলেন, স্থানীয় কয়েকজন বাড়ী মালিকদের জোরাজুরি ও ঠিকাদার জলিল মন্ডলের চাপের কারণে সে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা প্রতি বাড়ি মালিকদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ টিকিয়ে রাখবেন এবং মামলায় হয়রানি হতে হবে না এমন গ্যারান্টি দিয়ে সংযোগ দিচ্ছেন। তবে কত টাকার বিনিময়ে তিনি এ সংযোগ পেলেন তা জানাতে অস্বীকার করেন ।

এবিষয়ে জানতে কথিত গ্যাস ঠিকাদার মোঃ জলিল মন্ডলকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।

বর্তমানে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা ব্যবসা। মাঝে মধ্যে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান হলেও বাড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায়, অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের উৎসাহ বাড়ছে । আবার অধিকাংশ বৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীরা অনুমোদিত চুলার থেকেও কয়েকগুন চুলা বেশি ব্যবহার করছেন।    অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের মাধ্যেমে একটি কুচক্রি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা আর সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। গ্যাস আইন ২০১০ অনুযায়ী অবৈধ সংযোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিলেও তা যথেষ্ট হচ্ছে না। তাই জাতীয় সম্পদ গ্যাস রক্ষার্থে, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এবং গ্যাসের সুষম বন্টনের লক্ষ্যে আরো কঠোর আইন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল ।

এবিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাভার জোনের ব্যবস্থাপক আবু সাদাত মোঃ সায়েম বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। উক্ত এলাকায় আমরা বেশ কয়েকবার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। কয়েকটি মামলাও চলমান রয়েছে। আমরা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিবো। তবে একসাথে সকল এলাকায় অভিযান করা সম্ভব হয়না। নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে  ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয় দুষ্কৃতকারীরা। এতে করে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা থাকে। সাধারণ জনগণ সচেতন না হলে শুধু আইন করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যাবহার বন্ধ করা সম্পূর্ণ সম্ভব হচ্ছে না। আমরা অবৈধ সংযোগ ব্যাবহারে সকলকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীরা কয়েকগুন বেশি চুলা ব্যবহার করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাহারা অনুমোদনের বাহিরে অতিরিক্ত চুলা ব্যাবহার করছে এমন গ্রহকদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলছে। তবে ৫২ হাজার গ্রাহকের বিরুদ্ধে একসাথে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে জাতীয় সম্পদ গ্যাস রক্ষার্থে এবং সরকারি রাজস্ব সঠিকভাবে  আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের সকল প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by