আন্তর্জাতিক

বন্দীদশায় হাতে লেখা কোরআন ২০০ বছর পরও অক্ষত

  প্রতিনিধি ২৩ আগস্ট ২০২৩ , ৭:৪৭:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

২০০ বছরের পুরোনো হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরীফ শোভা পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় একটি মসজিদে। সেই কোরআনের ইতিহাস তুলে ধরে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার এক ইমাম কোরআনের সংস্করণটি হাতে লিখেছিলেন। ১৯৮০ এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার আওয়াল মসজিদের সংস্কার কাজ চলছিল। সেই কাজ করতে গিয়ে একটি কাগজের ব্যাগে এই কোরআন আবিষ্কার করেন নির্মাণশ্রমিকরা।

গবেষকরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন কাদি আবদুস সালাম নিজের স্মরণশক্তি দিয়ে এই কোরআনটি শরীফটির অনুলিপি লিখেছিলেন। তাকে সম্মান করে তুয়ান গুরু বলা হতো যার অর্থ সর্বোচ্চ শিক্ষক। ১৭৮০ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাকে বন্দী করে আফ্রিকায় নিয়ে যায় ডাচরা। ডাচ ঔপনিবেশকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় শাস্তি হিসেবে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দী অবস্থাতেই তিনি কোরআনের অনুলিপিটি লিখেন বলে ধারণা গবেষকদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার আওয়াল মসজিদ কমিটির সদস্য কাশিম আব্দুল্লাহ বলেন, `যখন পাওয়া যায় তখন এটি ধুলোয় ঢাকা ছিল। দেখেই মনে হচ্ছে অন্তত ১০০ বছর পুরাতন কিছু হবে। এর সঙ্গে তুয়ান গুরুর লেখা বেশ কিছু বাণী সম্বলিত একটি বাক্সও পান নির্মাণশ্রমিকরা।

তিনি জানান, কোরআন শরীফটি বাধাই অবস্থায় ছিল না। খোলা পাতাগুলোতে নাম্বার বসানো ছিল না। কিন্তু শতবর্ষ পুরোনোর তুলনায় খুবই ভালো অবস্থায় ছিল সেগুলো। কালো ও লাল কালিতে লেখা আরবি হরফগুলো ছিল একদমই স্পষ্ট।

স্থানীয় মুসলিমরা পরীক্ষা তখন সবগুলো পাতা ক্রমানুসারে বসান আর বাঁধাই করেন। মরহুম মাওলানা তাহা কারান এই কঠিন কাজটি করেন। স্থানীয় কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে তিন বছর সময় ধরে তারা এই কোরআন শরীফটি পূর্ণ রুপ দেন।

১৬৯৪ সালের এই কোরআন শরীফটি এখনও যত্নে আগলে রেখেছেন কেপ টাউনের মুসলিমরা। এরপর থেকে আওয়াল মসজিদে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে এটি। ১৭৯৪ সালে এই মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তুয়ান গুরু নিজেই।

এখন পর্যন্ত তিনবার এই মূল্যবান কোরআন শরীফ চুরির চেষ্টা করা হয়েছে। সুরক্ষার জন্য বুলেট ও ফয়ারপ্রুফ কাঁচের মধ্যে এটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে মসজিদ কমিটি।

তুয়ান গুরুর জীবনী লেখক শফিক মর্টন বলেন, প্রথম পাঁচ পাতা সম্ভবত তুয়ান গুরু রোবেন দ্বীপে বন্দী অবস্থায় লিখেছিলেন। একই দ্বীপে বন্দী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। শফিক বলেন, তুয়ান গুরু দুইবার রোবেন দ্বীপে বন্দী ছিলেন। প্রথমবার ১৭৮০ থেকে ১৭৮১ সাল। এরপর ৬৯ বছর বয়সে আবার বন্দী হন তিনি। এবার ১৭৮৬ সাল থেকে ১৭৯১ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করতে হয় তাকে।  

শফিক মনে করেন, কোরআনের বাণী দিয়ে অন্যান্য বন্দীদের মনোবল চাঙা রাখার চেষ্টা করতেন তুয়ান গুরু। সবাইকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করতেন।

তিনি বলেন, আপনি যদি সেসময় ডাচদের ব্যবহার করা কাগজ নিয়ে গবেষণা করেন। দেখবেন এগুলো সেই পাতাতেই লেখা। তার কলমগুলো তিনি নিজেই বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছিলেন। আর কালি জোগাড় করেছিলেন কারারক্ষীদের কাছ থেকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইসলামি ইতিহাস বিষয়ক প্রভাসক শেখ ওয়াইসি বলেন, তুয়ান গুরু বুঝতে পেরেছিলেন ডাচ কলোনির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম বন্দীদের মধ্যে ইসলামি চেতনা ধরে রাখা প্রয়োজন। সেসময় ডাচরা বন্দীদের জোর করে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতো। আর অন্যদিকে নীরবে কোরআনের অনুলিপি লিখে চলতেন তুয়ান গুরু।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by