দেশজুড়ে

বাগেরহাটের খামারিরা গরুর দাম নিয়ে শঙ্কায়

  প্রতিনিধি ১৩ জুলাই ২০২০ , ৩:৪৭:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক: চাহিদার তুলনায় বাগেরহাট জেলায় এবার পশুর পরিমাণ অনেক বেশি। তারপরও হাসি নেই খামারিদের মুখে। করোনা পরিস্থিতিতে নিজের আদরের ধনের উপযুক্ত দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। সরকারি হিসেবে, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে বাগেরহাট জেলায় ৪৩ হাজার ৮২৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৩০ হাজার ৭২৩, মহিষ এক হাজার ১৩, ছাগল ১০ হাজার ৭৮৬, ভেড়া ১ হাজার ১৫৩ এবং ১৫০টি অন্য পশু রয়েছে। তবে বাস্তবিক অর্থে কোরবানি উপলক্ষে প্রস্তুত পশুর পরিমাণ অর্ধলাখের কম নয়।

চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও যাবে বাগেরহাটের গরু। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার কোরবানির ঈদের বাজার তেমন ভাল যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। কোরবানির হাটে গবাদি পশুর দাম কম থাকলে খামারিদের সঙ্গে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়বে। এজন্য করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির আগ মুহুর্তের হাটের জন্য অপেক্ষা না করে এখন থেকেই গবাদি পশু বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান।

গবাদি পশু পালনকারীরা জানায়, মূলত কোরবানি উপলক্ষেই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু মোটাতাজা করি। কোরবানির ৪-৫ মাস আগে থেকে কোরবানি পর্যন্ত কয়েক দফা পশু খাদ্যের দাম বাড়ে। সে অনুযায়ী কোরবানির সময় পশুর দামও বাড়ে। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে পশু খাদ্য ও আনুসঙ্গিক সবকিছুর দাম বেড়েছে। পশুর হাট তেমন বসছে না, আবার কিছু হাট বসলেও ক্রেতার দেখা নেই। এই পরিস্থিতিতে কোরবানির আগ মুহুর্তেও গবাদি পশুর তেমন দাম হবে না। এই পরিস্থিতি থাকলে এ বছর লোকসানে পড়তে হবে আমাদের।

বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আজিজুল হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর গাভী ও ষাঁড় মিলিয়ে ২০টির উপরে গরু পালন করি। এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য চারটি বড় গরু রয়েছে। যার স্বাভাবিক দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। কিন্তু এখনও তেমন কোনো ক্রেতা আসছেন না। দু’একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী আসলেও গরুর দাম অর্ধেক বলছে। আসলে এই গরু পালনের জন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছি, তাও উঠবে না। করোনা পরিস্থিতি এরকম থাকলে এবং গরুর দাম না বাড়লে এবার মাঠে মারা যাব।
শুধু আজিজুল হাওলাদার নয় এরকম আশঙ্কা বাগেরহাটের বেশিরভাগ খামারিদের মধ্যে। দেপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলমগীর মোল্লা বলেন, প্রতি বছর কোরবানিতে ১০-২০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করি। কোরবানির দুই মাস আগে থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা খামার থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর খামারে ১৫টি গরু থাকলেও, তেমন কোনো ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরাও গরু নিতে সাহস পাচ্ছেন না। স্বাভাবিক দাম পেলে ৩০ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে এবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হবে বলা যাচ্ছে না।

কচুয়া উপজেলার গরু খামারি হানিফ শেখ বলেন, বাইরে তেমন কোনো কাজ করতে পারি না। প্রতিবছর ২-৩টা গরু পালন করি। ৪-৫ লাখ টাকা বিক্রি করি। খরচ করে যে লাভ হয় তা দিয়ে সারা বছর চলি। করোনার কারণে এবারের অবস্থা তেমন ভাল না। কি হবে আল্লাহ-ই ভাল জানেন।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাজার ভাল আছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে। অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে অতিরিক্ত লাভের জন্য খামারিরা তাদের পশুকে ইনজেকশন বা অন্যকোনো ক্ষতিকারক খাবার না খাওয়ায় সেজন্য আমাদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by