বিশেষ প্রতিবেদন

বিআরটিসি’তে অদক্ষ কারিগর নিয়োগ এক্যাটাগরির কারিগরই জানেনা কাজ

  প্রতিনিধি ৩১ জুলাই ২০২৩ , ৭:৫৭:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল :

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিআরটিসি’তে কয়েক দফায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কারিগর নিয়োগ দেওয়া হলেও সংকট কাটছেনা কারিগরের। আর এ সংকটের জন্য অদক্ষ কারিগর নিয়োগকে দোষারূপ করছেন সিনিয়র কারিগররা। তাদের অভিযোগ নতুন নিয়োগ পাওয়া কারিগররা কাজ না জানায় তাদের কে একদিকে কাজ শিখাতে হচ্ছে অন্যদিকে রাজস্বের জন্য গাড়ী প্রস্তুত করতে সময় বেশি লাগছে। এতে কাজের চাপ আগের থেকে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন বিভিন্ন ডিপোর সিনিয়র কারিগর’রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন নিয়োগ পাওয়া কারিগরের অধিকাংশই অদক্ষ। যোগদানের পূর্বে এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এরা এককভাবে কোনো কাজ করতে পারেনা। এমনকি এদের অনেককে কাজ দেখিয়ে দিলেও তা করতে পারেনা। নিজেরা কাজ করে যে সময়ের মধ্যে ফিনিসিং দেওয়া যায় এদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে তার দ্বিগুন সময় অপচয়ের কথা বললেন ডিপোর একাধিক সিনিয়র কারিগররা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কারিগর ভোরের দর্পণকে বলেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া অনেক কারিগর ইঞ্জিন মেরামতের টুলসের নামও বলতে পারে না। আবার এদের অনেকের ট্রেড সর্ম্পকেও ধারণা নেই। শিক্ষার সনদ থাকলেও টেকনিক্যাল যোগ্যতা নেই এদের অনেকের। এছাড়া কাজ শেখার প্রতি আগ্রহ এদের কম। তাছাড়া কোন কাজ করতে দিলে একক ভাবে এরা কাজ করতে পারেনা। কাজ করলেও উল্টা-পাল্টা করে যা আবার খুলে ঠিক করতে দ্বিগুনের বেশি সময় লেগে যায়। কাজের জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে চায়না এরা। অফিস টাইমে আসে আবার অফিস টাইম শেষ হলে চলে যায়। এদের কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্পোরেশনের উর্ধ্বাতন কর্মকর্তাদেরকে নিজেদের লোক পরিচয় দিয়ে সিনিয়র কারিগরদের ভীতস্থ করার ও অভিযোগ আছে।

বছর খানেক আগে মতিঝিল বাস ডিপোতে যোগদান করেন মো. অলিউল ইসলাম। এ ক্যাটাগরির কারিগর হিসেবে নিয়োগ পেলেও তিনি জেনারেল কারিগর হিসেবে কাজ করতে অক্ষম। নিজ দায়িত্বে কোন গাড়ীর মেরামত করতে পারেন না। মূলত; ইঞ্জিন মেরামতের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি ইঞ্জিন মেরামতের টুলসের নাম ও ঠিকমতো বলতে পারেন না। ইঞ্জিনের ত্রæটি ধরতে অক্ষম এ কারিগর। এ কারণে তাকে বিভিন্ন শাখায় ঘুরতে হচ্ছে। ইঞ্জিনের কাজ না জানায় কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়ে চেকের কাজ করান বলে জানিয়েছেন ওই ডিপোর এক সিনিয়র কারিগর।

বিভিন্ন মডেলের গাড়ীর শাখার দায়িত্ব পালন করার কথা একজন এ ক্যাটাগরির কারিগরের। সেখানে শাখার একজন সি গ্রেডের কারিগরের দক্ষতা মো. অলিউল ইসলাম অর্জন করতে পারেনি। সঠিক কাজ করতে না পারায় তাকে দুই দুই বার গাজীপুর ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এ কারিগর।

ডিপোতে এ ক্যাটাগরির কারিগররা কাজ বুঝে দিতে এবং নিতে না পারায় চালক দিয়ে কারিগর শাখা পরিচালনা করছে মতিঝিল বাস ডিপো। এ ক্যাটাগরিতে নিয়োগ পাওয়া কারিগরের কাজ ছিলো ডিপোর কাজ বুঝে দেওয়া ও কাজ বুঝে নেওয়া। এ ক্যাটাগরির কারিগররা কাজ পরিচালনায় অক্ষম হওয়ায় চালক ইকবালকে দিয়ে কারিগরি শাখা পরিচালনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ওই ডিপোর সিনিয়র কারিগররা।

মতিঝিল বাস ডিপোতে নিয়োগ পাওয়া আরেক কারিগর রুমা শেখর রায়কে ইঞ্জিনে কালো ধূয়া বের হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন আরেক কারিগর। জবাবে তিনি গাড়ীতে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে কালো ধূয়া বের হওয়ার কথা বলছেন। আবার ইঞ্জিনের স্যালেন্ডার সর্ম্পকে প্রশ্ন করলে তার ও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। একই ডিপোতে বি গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া কারিগর আল-আমিন ইঞ্জিন মেরামত কাজ না জানার কথা নিজে শিকার করেছেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া আরেক কারিগর মো. হানিফ লেদ মেশিনের কাজ জানার কথা বললেও লেদ মেশিনের নাম বলতে পারেননি। অবশ্য তিনি শিকার করেছেন, লেদ মেশিনের উপর এক মাসের ট্রেনিং করেছেন কিন্তু কাজ করেননি।

সোনাপুর বাস ডিপোতে বি-গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া কারিগর এনামুল হক অটো মোবাইল ইলেকট্রিকে যোগদান করলেও অটো মোবাইল ইলেকট্রিকের উপর কোন ধারণা নেই। তিনি অটো মোবাইলের কোন কাজ করতে পারেন না। জানা যায় এ কারিগর এস এস সি পাশ করে হাইবোল্টেজ ইলেকট্রিকের উপর এইচ এস সি পাশ করছেন। তিনি অটো মোবাইল ইলেকট্রিকে চাকরি পাওয়ায় অনেকে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।

মিরপুর বাস ডিপোতে বি গ্রেডে যোগদান করছেন ইব্রাহিম হোসেন ইমন। তিনি যে সেকশনে যোগদান করেছেন ওই সেকশনের সিনিয়র এক কারিগর জানিয়েছেন, নতুন যোগদান করা এ কারিগর কাজ জানেন না। কাজ দেখিয়ে না দিলেও তিনি তা করতে ও পারেন না।

নরসিংদী বাস ডিপোতে এ গ্রেডে ইলেকট্রিক সেকশনে যোগদান করেছেন মো. নুর ইসলাম। তিনি ও কাজ বোঝেন না। অন্য কারিগর কাজ দেখিয়ে না দিলে নিজের থেকে তিনি কোন কাজ করতে পারেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারিগর বলেন, নুর ইসলাম আগে আউটসোর্সিং কারিগর হিসেবে কাজ করতো। টাকার বিনিময়ে তিনি কাজ না জেনেও এ গ্রেডে চাকরি পেয়েছেন। অথচ এ গ্রেডে যারা কাজ করেন তারা মুলত ফোরম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এ গ্রেডে নিয়োগ নেওয়া এ কারিগর ঠিকমতো কাজই জানেনা। চাকরির বয়স প্রায় বছর হতে চলল এখনো তিনি একক ভাবে কোনো কাজ করতে পারে না।

এ ছাড়া আরেক কারিগর সি গ্রেডে চাকরি নিয়েছেন, যিনি কাজ জানা তো দুরের কথা যন্ত্রপাতির নাম পর্যন্ত বলতে পারেননা।

চট্রগ্রাম বাস ডিপোতে এ ক্যাটাগরির কারিগর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গোলাম কুদরত। ইলেকট্রিক ট্রেডে যোগদান করা এ কারিগর টেকনিক্যাল কোন কাজই জানেনা বলে জানিয়েছেন ওই ডিপোর সিনিয়র এক কারিগর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কারিগর ভোরের দর্পণকে বলেন, বছর খানেক ধরে চট্রগ্রাম বাস ডিপোতে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ একক ভাবে তিনি করতে পারেন না।

বিআরটিসি গাজীপুর ট্রেনিং সেন্টার থেকে একবার ট্রেনিং দেওয়া হলেও এ কারিগর কোন কাজ শিখতে পারেননি। কর্তৃপক্ষ আবারও তাকে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছেন বলে জানা যায়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by