বাংলাদেশ

বিএনপির নতুন আন্দোলন ঠেকাতে কি কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

  প্রতিনিধি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৬:২৪:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির নতুন আন্দোলন ঠেকাতে কি কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় তিন সপ্তাহ চুপচাপ থাকার পরে নতুন করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যে এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে।

এ অবস্থায় বিএনপিকে মোকাবেলা করে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, সেটি নিয়েই এখন মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা মুখে বলছেন, তারা বিএনপির আন্দোলনকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না।

তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মতো আমজনতার ইস্যুকে বিএনপি এবার এজেন্ডা হিসেবে বেছে নিয়ে যেভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চাচ্ছে, সেটি ঠিকঠাক মোকাবেলা করতে না পারলে সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন বলেন, আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে বিএনপি এবার এমন একটি বিষয়টিকে সামনে এনেছে, যেটি এদেশের সাধারণ মানুষের ইস্যু। কাজেই কৌশলে এই আন্দোলন মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় তারা কখনো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থেকেছে, আবার কখনো মামলা দিয়ে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের দমন করেছে।

পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন উত্তেজনা বাড়তে দেখা গেছে, তেমনি সহিংস ঘটনাও ঘটেছে।

অন্যদিকে, বিরুদ্ধ মতের ওপর দমন-পীড়ন নিয়েও বিভিন্ন সময় পশ্চিমাদের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারকে।

এ অবস্থার মধ্যেই বিএনপি-বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এবারও কি তারা আগের নীতিতেই চলবে, নাকি কৌশলে পরিবর্তন আনবে?

নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে অংশ নিতে গত ৩০শে জানুয়ারি দুপুরে যখন সদ্য বিজয়ী জনপ্রতিনিধিরা সংসদ ভবনে ঢুকছিলেন, তখন সংসদ বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা মিছিল করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনের পর গত দশ দিনে এভাবে সারা দেশে অন্তত দু’দফায় কালো পতাকা মিছিল করতে দেখা গেছে বিএনপিকে।

এসব কর্মসূচিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মতো বিষয়কে সামনে এনে ‘জনরোষ’ তৈরির মাধ্যমে সরকারের পতনের হুমকি দিচ্ছেন দলটির নেতারা।

কিন্তু বিএনপির এই আন্দোলনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কতটা আমলে নিচ্ছে?

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা আমলেই নিচ্ছি না, মোকাবেলা করা তো দূরের কথা।

তিনি আরও বলেন, তাদের এসব আন্দোলনের কথা বহুদিন ধরেই এদেশের মানুষ শুনতেছে। এটা নতুন কিছু না। আগেও তারা বহুবার এগুলো বলেছে, তারপর ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত ষোল বছর ধরেই বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ, রোড মার্চ-সহ নানান আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনেও পার হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময়। কিন্তু দলটি এখনও পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। বরং তাদের আন্দোলনের মধ্যেই টানা চতুর্থ দফায় সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি এখন ব্যর্থতার গ্লানিতে ডুবে রয়েছে। তাই দল রক্ষার জন্য, নেতৃত্ব রক্ষার জন্যই তারা গতানুগতিক এসব কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা এগুলোতে মোটেও চিন্তিত না।

গত সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পশ্চিমা দেশগুলোর তাগিদের প্রেক্ষিতে শুরুতে এক ধরনের চাপে পড়েছিল ক্ষমতাসীনরা।

কিন্তু সেই চাপ সামলে আবারও ক্ষমতার আসনে বসতে পারায় আওয়ামী লীগ যে আগের চেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, দলটির নেতাদের কথাতেই সেটি স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, জনগণের রায় নিয়েই আমরা সরকার গঠন করেছি। এটা মামার বাড়ির আবদার না যে বিএনপি চাইলেই সরকার পতন হয়ে যাবে। যে দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে, সেটি রাস্তাতেই পড়ে থাকবে।

নির্বাচনের আগে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের পরেও বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে গত ২৭শে জানুয়ারি গুলিস্তানে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলটিকে।

কিন্তু এর দু’দিন পরেই বিএনপির দ্বিতীয় দফার কালো পতাকা মিছিলের বিপরীতে আওয়ামী লীগ যে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল, সেই কর্মসূচিতে হঠাৎ-ই পরিবর্তন দেখা যায়।

সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।

তাহলে রাজপথে বিএনপিকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের কৌশলে কি কোনও পরিবর্তন আসছে?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা তাদের এগুলো কেন মোকাবেলা করতে যাব? আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব, মানুষের পাশে থাকব।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বাড়ছে।

এতে সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবন ধারণ করা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও বিরোধীদের এই পরিকল্পনা অজানা কিছু নয়। তাছাড়া দলটির নির্বাচনী ইশতেহারেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার চেয়ে বিরোধীদের আন্দোলনের প্রধান ইস্যুর মৃত্যু ঘটানোই এখন ক্ষমতাসীনদের নতুন রাজনৈতিক কৌশল।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, সব সময় দেশের মানুষের পাশে থেকে উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং গণতন্ত্রকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে কাজ, সেটি আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করে যাব। এখন এটিই আমাদের কৌশল।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by