রাজশাহী

বিজয়ের ৫ দিন পর হানাদার মুক্ত হয় নাটোর

  প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২১ , ৫:৩২:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

নাটোরে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের বেশির ভাগ এলাকা মুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস করলেও সেদিন নাটোর ছিলো অবরুদ্ধ। বিজয়ের পাঁচদিন পর ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর অবরুদ্ধ নাটোরে আত্মসমর্পণ করে পাকবাহিনী। ১৯৭১ সালের এই দিনে নাটোরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। সেদিন নাটোরের উত্তরা গণভবনে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার পাকিস্তান বাহিনী নাটোরের দিঘাপতিয়া গভর্নর হাউসে রাজশাহী বিভাগের সেক্টর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করায় নাটোর হানাদার মুক্ত হয়েছিল পাঁচদিন পরে ২১ ডিসেম্বর।

পাকিস্তান বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের হেড কোয়ার্টর নাটোরে হওয়ায় ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ অঞ্চলের পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের এখানে জড়ো করা হয়। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজশাহী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও রংপর অঞ্চলের আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানী সকল সেনা সদস্য এবং তাদের পরিত্যক্ত গোলাবারুদ ও যানবাহনসহ নাটোরে নিয়ে আসা হয়। নাটোরের দিঘাপতিয়া গভর্নর হাউস, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, পিটিআই, ভিটিআই ও ফুলবাগান চত্বরে জড়ো করা হয়। ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর দিঘাপতিয়া গভর্নর হাউসে পাকিস্তান বাহিনীর অফিসার ও জওয়ান মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৬৯৫ সেনা সদস্যসহ তাদের হেফাজতে থাকা রসদ ও যানবাহন নিয়ে মেজর জেনারেল নজর হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্র বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার লেফট্যানান্ট জেনারেল লসমন সিং এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

ঐতিহাসিক এ দলীলে পাক বাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন নাটোর গ্যারিসনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ও মিত্রবাহিনীর পক্ষে ভারতের ১৬৫ মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নু। সেই থেকে ওই দিনটিকেই নাটোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে শহীদ সাগর, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, ছাতনী ও ফতেঙ্গাপাড়ায় গণকবর সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৈরী করা হয়েছে আরো বেশ কিছু স্মৃতি ফলক। সরকারী ভাবে মাদ্রাসা মোড় সড়কদ্বীপে স্বাধীনতার ৩৪ বছর পর তৈরী করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ এবং ফুলবাগানে গণ কবর স্মৃতিস্তম্ভ। কানাইখালীতে শহীদ রেজা-রন্জু-সেলিমের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে পৌর এলাকার কয়েকটি সড়কও শহীদদের নামে নাম করণ করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নবাবগঞ্জ থেকে পাকসেনারা নাটোরের পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস সরকারি কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি ও দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনে (তৎকালীন গভর্নর হাউস) আশ্রয় নেয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও নাটোরের মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের মূল্যায়ন না করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by