বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ বিপর্যয়: ৭ ঘণ্টায় দুই হাজার কোটির ক্ষতি

  প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২২ , ৮:১৫:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

জাতীয় গ্রিডের ত্রুটির কারণে গতকাল মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সারাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে তা সবারই জানা। পুরো দেশবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সেটিও কারো অজানা নয়। এর কারণে বাণিজ্যিক কাজ থেকে শুরু করে সব রকম প্রাত্যহিক কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তেমনি দেশের পোশাক শিল্পের কাজেও ঘটেছে ব্যাঘাত। এমন পরিস্থিতির জন্য অদূরদর্শিতা ও অপরিকল্পনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি হয়তো কারণ বের করতে পারবে তবে অন্যান্য খাতের মতো পোশাক শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তা পুষিয়ে নেওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য। গতকালের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পোশাক শিল্পে প্রায় এক হাজার দুইশো ৩৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, দেশ থেকে একদিনে পোশাক রপ্তানি হয় ১২০ মিলিয়ন ডলারের। সে হিসাবেই গতকাল বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পোশাক শিল্পে এই ১২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় এক হাজার ২৩৬ কোটি টাকা (এক ডলার = ১০৩ টাকার হিসেবে)।

বিজিএমইএ নেতারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিল্প কারখানাগুলোকে। এমনিতেই গ্যাস সঙ্কটের কারণে দিনের শুরু থেকে বিকাল পর্যন্ত উৎপাদন একরকম বন্ধই থাকে। বিকেল বা সন্ধ্যার পর থেকে গ্যাসের চাপ বাড়লে শিল্পের উৎপাদন শুরু হয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয় হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার শিল্পের চাকা ঘুরেনি বললেই চলে। এজন্য এই একদিনে ১২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

আরো জানা গেছে, গতকাল শিল্প এলাকার প্রায় সব কারখানাই বন্ধ ছিল। এতেই ক্ষতি হয়েছে বেশি। এছাড়া অনেকে কারখানা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে চালু রেখেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ চালু রাখায় অনেক কারখানার জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেছে। এর মাধ্যমেও শিল্পমালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এ বিপর্যয় ঘটে। এরপর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এদিন অন্যান্য দিনের মতো পোশাক কারখানাগুলো বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা ছিল। তবে দুপুর ২টা থেকে ছুটির আগ পর্যন্ত সময়ই ছিল জেনারেটরনির্ভর। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, আবার পণ্যের মানও নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান শিল্প উদ্যোক্তারা।

বিকেএমইর সহ-সভাপতি শামীম এহসান বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের কারখানায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে যে খরচ হয় জেনারেটরে সেখানে বড় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। তবে দুপুর থেকে কারখানা বন্ধ পর্যন্ত কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পণ্যের মান ও উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।’

এ বিষয়ে বিজিএমইএ-এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারখানায় জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার চেষ্টা হয়েছে। তবে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হলে পণ্যের কোয়ালিটি, উৎপাদন ও খরচ বেড়ে যায়। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাব যেন এ সমস্যার সমাধান হয়। এটা অব্যাহত থাকলে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

অন্যদিকে পোশাক শিল্পের মতো টেক্সটাইল খাতসহ সব ধরনের শিল্প কারখানাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গতকাল। সব মিলে একদিনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে স্পিনিং মিলগুলোও দিনের প্রায় পুরোটা সময় বন্ধ ছিল। এমনিতেই গ্যাস সঙ্কটের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয় সঙ্কটটি আরও বাড়িয়ে দিল।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by