দেশজুড়ে

বিশ্বে ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৯ ধাপ পেছাল চট্টগ্রাম

  প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২১ , ৫:১৭:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

২০২১ সালে কনটেইনার পরিবহনের হিসাবে বিশ্বের ১০০ ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ৯ ধাপ পিছিয়েছে। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। এরআগে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮ তম ও ২০১৯ সালে ৬৪ তম।

সোমবার রাতে লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টে এ তালিকাটি প্রকাশ করে। ২০২০ সালে সারা বিশ্বের বন্দরগুলোর ব্যস্ততা, অর্থাৎ কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে শীর্ষ ১০০টি বন্দরের তালিকা তৈরি করেছে লয়েডস লিস্ট।

লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে ৬৩ কোটি ২০ লাখ একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৯ এর তুলনায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কম। আর একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন কমেছে ৮ শতাংশ।

লয়েডস লিস্টের তালিকায় অবশ্য বন্দরের সেবার মান বিবেচনা করা হয় না। এরপরও তালিকায় পিছিয়ে যাওয়ার অর্থ বন্দরটি দিয়ে কনটেইনারে বৈদেশিক বাণিজ্য কমেছে। সমুদ্রপথে দেশের কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ এই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়।

এতে একক বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামের অবস্থান পিছিয়ে যাওয়ার অর্থ বৈদেশিক বাণিজ্যও কমে যাওয়া। একটানা সাত বছর বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় এগিয়ে যাওয়ার পর এবারই ছন্দপতন ঘটল।

লয়েডস লিস্ট ২০১৩ সাল থেকে বৈশ্বিক ক্রমতালিকা প্রকাশ করে আসছে। ২০১৩ সালে কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৮৬তম। এরপর টানা সাত বছর এগিয়ে গেছে এই বন্দর। এবারই হোঁচট খেল।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনার কারণে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমেছে। দেশে কলকারখানাও বন্ধ ছিল। এটিই বৈশ্বিক তালিকায় অবস্থান নেমে যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লয়েডস লিস্টের তালিকায় ৯ ধাপ পিছিয়েছে । এটা বন্দরের সক্ষমতার অভাব বা গাফিলতি নয়।

করোনা মহামারি যখন শুরু হয় তখন প্রথম ধাক্কাতে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের উন্নত দেশের অনেক বড় বড় বন্দর দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। তখনো চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে ৭ দিনই সচল ছিল। আশাকরছি দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দর সামনে অনেক এগিয়ে আসবে।

লয়েডস লিস্টের তালিকায় বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে চীনের সাংহাই। সেরার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি সিঙ্গাপুর পোর্টের। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম অবস্থান অর্জন করেছে যথাক্রমে চীনের নিংবো-ঝওশান, শেনজেন, গোয়াংজু, হংকং পোর্ট, কুইংদাও, তিয়ানজিন পোর্ট।

এছাড়া সপ্তম অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দর এবং ১০ নম্বরে নেদারল্যান্ডসের রটারডম বন্দর।

বিশ্বের সেরা ১০০ কনটেইনার বন্দরের তালিকায় প্রথমে রয়েছে চীনের সাংহাই বন্দর, তারপর তালিকায় ধারাবাহিকভাবে রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর, চায়নার নিংবো জওশান বন্দর, চায়নার সেনজেন বন্দর, চায়নার জুয়াংজউ বন্দর, চায়নার কিংডাও বন্দর, সাউথ কোরিয়ার বুসান বন্দর, চায়নার তিয়ানজিন বন্দর, চায়নার হংকং বন্দর, নেদারল্যান্ডের রোটারডাম বন্দর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বন্দর, মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্ল্যাং, বেলজিয়ামের এন্টওয়্যার্প, চায়নার জিয়ামেন, মালয়েশিয়ার তানজুং পেলেপাস, তাইওয়ানের তাওসিউং, আমেরিকার লস এঞ্জেলস, জার্মানির হামবার্গ, আমেরিকার লংবিচ, ভিয়েতনামের হো চি মিনহ সিটি, আমেরিকার নিউইয়র্ক বন্দর, থাইল্যান্ডের লাইম চাবাং, ইন্দোনেশিয়ার তানজুং প্রিয়ক, শ্রীলংকার কলম্বো বন্দর।

এছাড়া মরোক্কোর তেনজার মেড, ভারতের মান্দ্রা, চায়নার ইংকও, গ্রীসের পীরায়াস, স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া, চায়নার তাইকাং, ভিয়েতনামের হাইপোং, চায়নার ডালিয়ান, স্পেনের আলজেসিরাস, চায়নার রিজহাও, চায়নার লিয়ানইউংএং, জার্মানির ব্রেমেন, সৌদি আরবের জেদ্দা, আমিরিকার সাবানাহ, ভারতের জোহরলাল নেরু, পানামার কোলন, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, ভিয়েতনামের চাই মেপ, ওমানের সালালাহ, জাপানের টোকিও বন্দর, ব্রাজিলের সন্তোষ, মিশরের পোর্ট সেইড, চায়নার কিঞ্জহও, ইন্দোনেশিয়ার তানজুং পেরাক, চায়নার পুজহও, কানাডার ভ্যানকাওভের বন্দর রয়েছে।

আরও রয়েছে আমেরিকার ফেলিক্স স্টেওয়ি, চায়নার ডংগুয়ান, আমেরিকার সিটেল, চায়নার ইয়ানতাই, সাউথ কোরিয়ার ইঞ্চিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী, ইতালির জিওয়িয়া টাউরো বন্দর, পানামার বালবোয়া, কলোম্বিয়ার কার্টাজেনা, চায়নার টেংশান বন্দর, চায়নার নেনজিং, আমেরিকার হোস্টন, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, স্পেনের বার্সেলোনা, মেক্সিকোর মানজানিলো, তুর্কির আমবার্লি, চট্টগ্রাম বন্দর (৬৭ তম), আমেরিকার ভির্জিনিয়া, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ভার্জিনিয়ার ইয়োকোহামা, জাপানের কুবে, সাউথ আফ্রিকার দুর্বান, ইতালীর জিনোয়া, জাপানের নাগোয়া, আমেরিকার ওয়াকল্যান্ড, মাল্টার মার্সাক্সলক, ফ্রান্সের লে হাব্রে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনী, জাপানের ওসাকা, আমেরিকার চার্লেসটোন, চায়নার কুয়ানজও, পেরুর চাল্লাও, সাউথ কোরিয়ার ইয়োসু জাংইয়াং, সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ, রাশিয়ার এসটি পিটার্সবার্গ, পাকিস্তানের করাচি, ইকুয়েডরের গুয়াইয়াকুইল, চায়নার হাইকও, চায়নার জিয়াজিং, তুর্কির মার্সিন, পোল্যান্ডের জিডাংস্ক, চায়নার নানটং, সৌদি আরবের দাম্মাম, জায়নার জুহাই, তাইওয়ানের তাইচুং, যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন, তুর্কির ইজমিথ, টোগোর লোমে, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর ও সবশেষ শততম অবস্থানে রয়েছে চায়নার জিনজোও বন্দর।

এই তালিকায় মোট ২৫টি চীনা বন্দর স্থান পেয়েছে। তালিকায় থাকা ভারতের দুই বন্দর জওহরলাল নেহেরু বন্দর ৩৯তম এবং মুন্ড্রা ২৬ তম অবস্থানে আছে। পাকিস্তানের করাচি বন্দরের থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ১৯ ধাপ এগিয়ে আছে। করাচির অবস্থান ৮৬তম।

১৭৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত লয়েডস লিস্ট শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদমাধ্যম। ১৭৩৪ সালে লন্ডনের কফি শপের পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল লয়েডস লিস্টের। জাহাজ ও এ সংক্রান্ত ব্যবসায় বাণিজ্যের নানা খবর ও বিশ্লেষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য ধরে রাখা প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে ইন্টারনেটনির্ভর সংস্করণ চালু করে।

উল্লেখ্য, দেশের আমদানি-রপ্তানির মোট কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ পরিচালনা করে চট্টগ্রাম বন্দর। বাকিগুলো পরিচালনা করে মংলা বন্দর।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by