রাজশাহী

বেড়ায় বাঁশপণ্যে উপার্জন

  প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি ২০২১ , ৪:০৪:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বসন্ত দাস, বেড়া (পাবনা) :

 

পাবনার বেড়া উপজেলার শত শত পরিবারের রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন বাঁশের তৈরি পণ্য। উপজেলার নাকালিয়া, হাটুরিয়া, রাকশা, কৈতলা, নগরবাড়ী, কাজিরহাট, আমিনপুর, মাসুমদিয়াসহ বেড়া পৌর এলাকার শেখপাড়া এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বাঁশপণ্যের সঙ্গে জড়িত। এ পেশাতেই চলে তাদের জীবন জীবিকা। বেড়া পৌর এলাকার শেখ পাড়া মহল্লার প্রায় সব পরিবার এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি শিক্ষার্থীরাও এসব পেশায় জড়িত। বাঁশ দিয়ে চাটাই, (তালাই) ধান রাখার ডোল, ডালা, চালনি, কুলা, হাঁস-মুরগির বাচ্চা পালনের খাঁচা ইত্যাদি গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য ও দৈনন্দিন কাজের নানা রকম জিনিস তৈরি করেন তারা। এসব বিক্রি করে চলে তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসার খরচ। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ধার-দেনায় পুঁজি খাটিয়ে বাপ-দাদার এ পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বেড়া উপজেলার শত শত কারিগর। তাদের তৈরি পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখান থেকে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য কিনে নেন। স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে এক থেকে দেড় হাজার টাকার বাঁশ পণ্য বিক্রী করতে পারেন খুচরা বিক্রেতারা। তাতে প্রতিজনের গড়ে প্রতিদিন লাভ থাকে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর এই লভাংশের টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া খরচসহ সংসারের খরচ মেটাতে হয়
তাদের।
এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ইশারত শেখ, ফজলাল শেখ, সিদ্দিক শেখ, অজয় মালী, মন্টু চন্দ্র বিশ^াসসহ অনেকেই নিজের মতো করে বলেন,আমাগরে টাহা পয়সা কম তাই বেশী কইর‌্যা বাঁশ কিনব্যার পারিনা। সরকার যদি ব্যাংক থেকে আমাগরে ঋণ দিত তাইলে আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। এতে সরকারেরও লাভ হোত, আমরাও লাভবান হতে পারত্যাম। তারা আরো জানান, সরকার তাদের সহজ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে নিয়মিত কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংকিং খাতেও সুনাম অর্জন করতে পারতেন। অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করা গেলে তাদের কাজের গতি বেড়ে যাবে এবং শ্রমের অপচয় হবে না। তবে ক্ষতিকর প্লাষ্টিক পণ্যের ভিরে ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশবান্ধব বাঁশশিল্প আজ ধ্বংসের মুখে দিন দিন কমছে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভোরের দর্পণকে জানান, বাঁশের ঝাড় বা যেকোন বাঁশ বেশি পুরনো হয়ে গেলে প্রকৃতিগত কারণেই মারা যায়। পুরোনো বাঁশ দিয়ে কৃষি পণ্য তৈরি করে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে উপজেলার অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে অত্যাধুনিক বা প্লাষ্টিক পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশ শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে এবং ঘরবাড়ি প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ির আঙ্গিনায় পতিত জমিতে বাঁশ রোপণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by