প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২২ , ৫:৪৪:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকায় কতিপয় সুদ কারবারির বেপরোয়াপনায় প্রাণ গেল এক গৃহ বধূর । নিহতের পরিবার সূত্রে জানাযায়, সুদের টাকার জন্য ঘরের আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেওয়ায় লজ্জায় তিনি আত্মহত্যা করেন। সোমবার (১০ অক্টোবর) সন্ধায় ভালুকার ভরাডোবা ক্লাবের বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ নাছরিন (৪৫) ওই এলাকার সুরুজ মিয়ার স্ত্রী।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় সুদ কারবারি মৃত আজিজ সরকারের পুত্র খাইরুল ইসলাম (৪৫) এর কাছ থেকে পুকুর বন্ধক রেখে সুরুজ মিয়ার পুত্র রিয়াদ (২৫) ৬০ হাজার টাকা ধার নেয় । পরে বেশ কিছু দিন সে সুদের টাকা পরিশোধ করতে অনিয়ম হওয়ায় সুদ কারবারি খাইরুল কৌশলে রিয়াদের কাছ থেকে সাদা চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ।
উপায় না দেখে রিয়াদ খাইরুলকে ৭০শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেয় । অন্য দিকে একই এলাকার হানিফ মিয়ার পুত্র রুবেল (২৬) এর কাছ থেকে ইউপি নির্বাচনের সময় ১৫ হাজার টাকা মাসিক সুদে রিয়াদ ধার আনেন । এতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদসহ ৭০ হাজার টাকা দাবী করে গত রবিবার রিয়াদের ঘরের ফ্রিজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা রুবেল নিয়ে যায় । পরের দিন (১০ অক্টোবর) সোমবার সকালে খাইরুল ও রুবেল আবার টাকার জন্য রিয়াদের বাড়ীতে এসে ঘরের সকল জিনিস পত্র বিকালে নিয়ে যাবার হুমকি দিয়ে চলে যায় ।
বিকালে রুবেল লোকজন নিয়ে রিয়াদের ঘর থেকে খাট , সোফাসহ মূল্যবান আসবাবপত্র বের করতে গিয়ে ঘরে তান্ডব শুরু করে । ওই সময় রিয়াদের মা নাছরিন বাঁধা দিলে রুবেল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চরম অপমান করেন । সেই অপমান সইতে না পেরে পাশের ঘরে আড়ায় উড়না দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে গৃহবধূ নাছরিন মৃত্যু বরণ করেন । হৈচৈয়ের শব্দ শুনে রিয়াদ বাড়ীতে এসে তার মায়ের কাছে কি হয়েছে জানতে গিয়ে মা নাছরিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন । তখন সুদ কারবারি রুবেল ও তার লোকজন কৌশলে ঘর থেকে পালিয়ে যায় । স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজ মেম্বার ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেয় ।
তিনি জানান, রিয়াদ একজন সহজ সরল ছেলে তাকে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে ওই চক্রটি তাকে শেষ করে দিয়েছে সহায় সম্পদ সব শেষ তার । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, ভরাডোবায় সুদ কারবারি সিণ্ডিকেট গড়ে তুলেছে খাইরুল রুবেলসহ আরও কয়েকজন নাম মাত্র টাকা দিয়ে অসহায় মানুষের সহায় সম্বল ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা। আর তাদের জবর জুলুমের কারনেই রিয়াদের মা নাছরিন আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ।
ভরাডোবা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদারের সাথে কথা হলে খাইরুল ও রুবেলের উচ্চ হারের সুদ কারবার এবং অসহায় মানুষের উপর জবর জুলুমের সত্যতা স্বিকার করেন। খবর পেয়ে সন্ধায় ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো : কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃত দেহটি উদ্ধার করেন ।
তিনি জানান সুদ কারবারির চাপে সে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ওই পরিবারটির উপর সুদ কারবারিদের এমন করা ঠিক হয়নি বলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি । এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রুবেল ও খাইরুলের মুঠো ফোনে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।