দেশজুড়ে

মুসলিমরাও ব্যস্ত সনাতন ধর্মাম্বলীদের পরম্পরা বান্নি উপভোগে

  প্রতিনিধি ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ , ৭:০২:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মুসলিমরাও ব্যস্ত সনাতন ধর্মাম্বলীদের পরম্পরা বান্নি উপভোগে

সনাতন ধর্মাম্বলিদের বাৎসরিক কিছু উৎসবের মধ্যে একটি উৎসব বান্নি যাহা শুদ্ধ উচ্চারণে মেলা বলা হয়। এই বান্নি শীতের মৌসুমে বিশেষ করে বাংলা মাঘ মাস থেকে শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রায় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন তারিখে এই মেলা পালন করে থাকে। বান্নি বাংলাদেশের প্রায় শতবর্ষেরও ঊর্ধ্বে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের বংশগত পরম্পরায় পালন করে আসছে।

বান্নি উপভোগ করার জন্য বিজয়নগর উপজেলার আব্দুল্লাহপুরে গত ১লা মাঘ এই বান্নি অনুষ্ঠিত হয়।

উপভোগের শরিকদার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়া মুসলিমরাও আগ্রহ ও উৎসাহের সহিত পালন করে আসছে।

এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ব্রাহ্মণশ্মশান ও জেঠা গ্রামের মধ্যস্তে কুঞ্জার বান্নি কয়েক বছর আগে ৭ দিনব্যাপী স্থাপিত হতো। তবে বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পাওয়াতে দিনক্ষণ কমিয়ে ৩দিনে নিয়ে এসেছে। ২রা মাঘ (জানুয়ারি ১৬) অনুষ্ঠিত জেঠাগ্রামের মেলায় কিছু ব্যতিক্রমী বিষয়ে আধুনিকতার ছোয়াতে এখনো পিছিয়ে আছে নাসিরনগর থানার জেঠাগ্রাম, ব্রাহ্মণশাসন ও আশপাশের গ্রামগুলো।

অনুষ্ঠিত এই বান্নি আগমনে হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ বিহীন পরম্পরা অবলম্বন করে আসছে। বান্নির দিন সকালে হিন্দুদের সাথে তাল মিলিয়ে মুসলিম পরিবারগুলো একে অপরকে টাকা বিনিময় করে আসছে। এবং মেলা থেকে উরফা, টিল্লাই, মুড়ি কই, জিলাপি, আখের লাঠি যার যার মতে করে নিজেদের বাড়িতে খরিদ করেন আনেন যাতে আগত মেহমান গুলোকে জামাই আদরে সকালের নাস্তা পরিবেশন করতে পারে।

মেহমান বিদায়ের সময় এগুলো সনাতনীদের মতো সাথে ব্যাগে করে দিয়ে থাকে। মেলাতে বেশ কয়েকশো রকমের দোকানী দেখা যায়, তাদের মধ্যে ছিল ফার্নিচারের, সেমাই, আখের রসের দোকান, ওরফাত টিল্লাই, চায়ের দোকান, হোটেল রেস্টুরেন্ট, নাগর দোলনা, ডান্স সু, এবং বিভিন্ন রকম খেলনার দোকান এলাকার ছোট বড় সবাই আনন্দ উল্লাসে সময় পার করছেন। এমনকি ভিন্ন জেলা থেকেও অতিথিদের আগমনের সমাগম দেখা যায়।

ঐ এলাকার যুবকরা ভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজনে জনপ্রতি চাদা করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আনন্দ উল্লাস করে থাকেন। মেলাতে চতুর্দিক থেকে, জমির আইল বেয়ে ও জমির মধ্য দিয়ে মুসলিম হিন্দু শাড়ি বেদে বেঁধে ছোট শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা, কিশোর-কিশোরীরা এই বান্নিতে আসতে দেখা যায়, যেমন মুসলমানদের ঈদের আনন্দের মত।

এরই মধ্যে কিছু বাচ্চাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এই বান্নি
আগনে, দাদা, দাদী, নানা-নানি, বাবা, মা, ভাই, বোন সকলেই তাদেরকে টাকা দিয়ে থাকে। বান্নির আগের দিন তারা ঘুমায়না। তারা খুব খুশিতে বান্নিতে গিয়ে বিভিন্ন রকম খাদ্য ও তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী খেলনা খরিদ করে থাকেন।

বান্নিতে বিভিন্ন রকম বাঁশির আওয়াজে ও পে পুর শব্দ শোনা যায়।

ব্রাহ্মণশ্মশানের ৭০ বছরের বৃদ্ধা রফিজ আলী বলেন, বান্নি আমাদের একটা পরম্পরা, আমরা ছোটবেলা থেকে উপভোগ করে আসছি এখন বুড়ো হয়ে গেছি আমার মন চায় না যাইতে। তবে আমার নাতি নাতনিদেরকে টাকা দিয়েছি তাদের ইচ্ছামত কিছু কিনতে আখের রস খাইতে। ঢাকা থেকে মেহমান ও সাতগাঁও থেকে আমার বোন ভাইগ্না এসেছে, তাদেরকে আমি টাকা পয়সা দিয়েছি বান্নিতে যাওয়ার জন্য। এই উসিলায় আমরা খুব আনন্দ উপভোগ করছি।

নাসিরনগর থানার এস আই দয়াল বলেন, উক্ত মেলায় আমি সর্বক্ষণ নজর দাড়িতে ছিলাম। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। যেহেতু হিন্দুদের একটা বার্ষিক অনুষ্ঠান, তাই সঠিকভাবে তারা উপভোগ করুক। শুরুতে একটু সমস্যা হয়েছিল তবে তা সমাধান করে ফেলছি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by