রাজশাহী

মোকামতলার মৃৎশিল্পর কদর কমছে

  প্রতিনিধি ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৮:১০:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

আপেল মাহমুদ, মোকামতলা (বগুড়া) :

থরে থরে সাজানো মাটির পাত্র। যেন প্রতিনিয়ত শিল্পীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ার অপরুপ প্রদর্শনী করে চলেছে। এসব মাটির পাত্র (খুঁটি) তৈরির পর যাচ্ছে আশপাশের কয়েকটি জেলা-উপজেলায়। ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও বিক্রি করছে বগুড়া মোকামতলা শংকরপুর পালপাড়ার মৃৎশিল্পিরা।

মৃৎশিল্পীরা জানান, আগে গ্রাম-গঞ্জে মাটির জিনিসের অনেক কদর ছিল। সাংসারিক কাজে হাড়ি-পাতিল, পাতিলের ঢাকনা, পিসনা, চাল ধোয়ার তসতা, ছোট শিশুদের নানা রকমের খেলনা সবই ছিল মাটির। এখন আর সময়ের পরিবর্তে মাটির জিনিসের কদর নাই বললেই চলে। তাই টয়লেটের কুপ আর নার্সারিতে চারাগাছ রোপণের জন্য টব আর খুঁটি নির্ভর হয়ে টিকে আছে মৃৎশিল্প। অমল চন্দ্র পাল জানান, মাটির খুঁটি (পাত্র) তৈরির জন্য প্রথমে এটেল মাটি সংগ্রহ করতে হয়।

তারপর মাটি কেটে কেটে প্রস্তুত করা হয় খুঁটি তৈরির জন্য। হাতে অনেকটা কষ্টকর হলেও এখন অনেকে মেশিনের মাধ্যমে মাটির কাজ করে খুঁটি, টব, কুয়ার পাট ও সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত হাড়ি-পাতিলসহ অনেক জিনিসপত্র তৈরি করেন। এরপর কাচা খুঁটিগুলো রোদে শুকিয়ে স্তুপাকারে ইটের ভাটার মতো সাজিয়ে আগুনে পুরলে ব্যবহারের উপযোগী হয়।

সুবল চন্দ্র পাল বলেন, আগে হাড়ি পাতিল বানিয়ে ফেরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করা লাগত। সময়ের পরিবর্তনে মাটির হাড়ি পাতিলের ব্যবহার কমে যাওয়ায় নার্সারী ব্যবসায়ীদের জন্য টব, খুটি তৈরি করে টিকে মৃৎশিল্প। আর এগুলো এখন ব্যাপারিরা গ্রামে এসে কিনে নিয়ে যায়। খুটির আকার ভেদে ৩-৫ টাকা পিস, টব ১০টাকা ও শৌচাগারে কুপ তৈরির রিং বিক্রি করা হয় ১২০-১৪০টাকা দরে।
ওই গ্রামের রবিন্দ্র চন্দ্র পালের সাথে কাজ করছে তার স্ত্রী প্রতিমা রাণী পাল তারা জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তাদের এই কাজ করছে। কষ্টকর কাজ হলেও তারা নিজেরা তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা নিয়েই জীবন জীবিকা চালাচ্ছেন।

কলেজ ছাত্র চঞ্চল পাল জানান, গ্রামের দু’চারটি পরিবার ছাড়া প্রায় সকল পরিবারই এখনো তাদের পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখেছে। নার্সারি ব্যবসা প্রসারিত হওয়ায় এর খুঁটি তৈরি করেই তাদের জীবন জীবিকা চলছে। প্রতিদিন গ্রাম থেকে প্রায় ১০হাজার খুঁটি বিক্রি হয়।

মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত পাল পাড়ার লোকজন বলেন, এখন এ পেশায় রয়েছে কাচামাল মাটি সংকট। এছাড়াও মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তারা সরকারী-বেসরকারী কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

সময়ের পরিবর্তে অনেকেই পূর্বপুরুষের এই পেশা অনেকে ছেড়ে দিয়ে নতুন পেশা বেছে নিচ্ছেন। আর তাদের অনেকে নার্সারি কাজে ব্যবহৃত টব আর খুঁটিতে টিকে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য টিকে রেখেছেন।

 

 

Powered by