দেশজুড়ে

রংপুরে বন্যা আতঙ্কে তিস্তাপাড়ে মাইকিং, সতর্কতা জারি

  প্রতিনিধি ৪ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:২১:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুরে বন্যা আতঙ্কে তিস্তাপাড়ে মাইকিং, সতর্কতা জারি

টানা বৃষ্টিতে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে তিস্তা বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।

বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং শুরু হয়। সেই সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সিকিমের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে তিস্তা নদী বেষ্টিত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা থেকে এ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস পেয়ে আশপাশে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। প্রতিবার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং শুরু হয়েছে। বন্যাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তাই আমার ইউনিয়নের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মাইকিং শুরু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মাইকিং করে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছি। ইতোমধ্যে অনেকেই পরিবার–পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌকা মজুত রাখা হয়েছে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো ঘরবাড়িতে পানি না উঠলেও এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গজলডোবা পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২৮৫ সেন্টিমিটার এবং দোমুহুনী পয়েন্টে বুধবার সকাল থেকে ৮২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অন্য নদীর পানি। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যা হতে পারে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, বন্যায় যেন মানুষের জানমালের রক্ষা হয় সে লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে। বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে কাজ চলছে। 

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে। সর্বসাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা প্রাইমারি অথবা হাইস্কুলে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।

রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারতের সিকিম অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে তিস্তা নদীতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইতোমধ্যে এসব তথ্য প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ২৭.৪, দিনাজপুরে ৫৪.৪, সৈয়দপুরে ২৭, নীলফামারীতে (ডিমলা) ১১.৯, কুড়িগ্রামে ১৫ এবং পঞ্চগড়ে ৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।   

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুত রয়েছে।

এর আগে পাউবো ঢাকার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পানি বৃদ্ধির কথা জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বিকেলেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by