দেশজুড়ে

রাজনৈতিক কারনে ছাত্রলীগ নেতা সজিব হত্যা, অভিযোগ পরিবারের

  প্রতিনিধি ১৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৩:৪৬:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক কারনে ছাত্রলীগ নেতা সজিব হত্যা, অভিযোগ পরিবারের

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে দলীয় পদ বাণিজ্যে’র আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা এম সজীব খুন হয়েছেন বলে স্বজনদের অভিযোগ। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন নিহতের মা বুলি বেগম। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়। এ ঘটনায় ‘বিচার চাই’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠেছে পুরো চন্দ্রগঞ্জ এলাকা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান ওসি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলিতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা  এম সজিবের বাড়িতে চলছে স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্নায় চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাত্র পাঁচ বয়সী কন্যা সন্তান জানে না অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে সে এতিম। নিহত সজীব চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে ও চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।

নিহতের মা বুলি বেগম ও স্বজনদের দাবি, ছাত্রলীগের পদের জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ছিল নিহত সজিবের। টাকা নিয়ে তাদের মাঝে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে কাজী বাবলু হত্যার হুমকী দিয়েছিল। কাজী বাবলু পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এম সজিবকে নির্মম ও নৃশংসভাবে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিহত এম সজিবের মা সহ স্বজনরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ রায়হান ও স্থানীয়রা জানায়, ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের যৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে সজীবকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যদের ওপরও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। হামলাকারীরা মুখোশ পড়া ছিল। পরে আহত অবস্থায় ওই চারজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সজীব, সাইফুল ও রাফিকে ঢাকায় প্রেরণ করে। জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন তারা।

এদিকে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২ টার দিকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা সজীব মারা যায়। এ ঘটনায় সকাল থেকে এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উত্তাল হয়ে ওঠেছে পুরো চন্দ্রগঞ্জ এলাকা। সকাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগের একাংশের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। । এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবির আহমেদ, ওয়াহিদুজ্জামান বেগ বাবলু, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিটন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব প্রমুখ। তারা সজিব হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। না হয় কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি মো. এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনার সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে সজীবের মা বুলি বেগম বাদী হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী বাবলুকে প্রধান করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে আরও ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। একইদিন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার দ্বিতীয় আসামি চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা জেলা কারাগারে রয়েছে। অন্যদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে ওসি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by