দেশজুড়ে

রাজশাহীর দুই ‘বিদ্রোহী’ হলেন নৌকার মাঝি

  প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর ২০২১ , ৭:১১:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী ব্যুরো : দু’জনেই নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। একজন নৌকা তুবাতে সক্ষম হন। নির্বাচিত হন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তবে অন্যজন হেরেছিলেন নৌকার কাছে। এবার এরা দু’জনেই হয়েছেন নৌকার মাঝি।

আগামী ৫ জানুয়ারির পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় প্রার্থী করে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা হলেন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ১৪ নম্বর হামিরকুৎসা ইউপির আনোয়ার হোসেন এবং ১৫ নম্বর যোগীপাড়া ইউপির এমএফ মাজেদুল। আনোয়ার এখন ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর মাজেদুল ইউনিয়ন আ.লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।

এদের মধ্যে আনোয়ার হামিরকুৎসা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী সাফিনুর নাহারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আনোয়ার হোসেন তখনও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

আর যোগীপাড়ায় দলীয় প্রার্থী মোস্তাফা কামাল প্রামানিকের বিরুদ্ধে ভোট করে পরাজিত হন উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এমএফ মাজেদুল। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হলেও আনোয়ার বা মাজেদুলকে বহিষ্কার করা হয়নি। উল্টো গতবছর সম্মেলনে ভোট ছাড়াই আনোয়ারকে ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর যুবলীগ থেকে আওয়ামীলীগে এসেছেন মাজেদুল। এবার তারা পেলেন নৌকার টিকিট।

অবশ্য ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের জন্যও তাঁরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তখন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর মধ্যে তুমুল বিরোধ। ভোটে সাংসদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে ইউনিয়নে ইউনিয়নে শুরু হয় সহিংসতা।

ফলে নির্বাচন কমিশন বাগমারার ১৬ ইউনিয়নেরই ভোট স্থগিত করে দেয়। পরে নতুন করে তফশিল ঘোষণা করলে হামিরকুৎসা ও যোগীপাড়ায় প্রার্থী বদল করে আওয়ামীলীগ। নৌকা পেয়ে যান উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাফিনুর নাহার ও মোস্তফা কামাল প্রামানিক। কিন্তু মাজেদুল ও আনোয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করেন। তখন সাংসদের কথায় খোদ উপজেলা আ.লীগের নেতারাই নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেন বলে অভিযোগ আছে। এবারও সাংসদের এ দুই অনুসারী মনোনয়ন পেলেন। মাজেদুল ও আনোয়ার বলেছেন, গতবার তারা প্রথমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ভোটগ্রহণের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। তাই পরে নৌকা না পেলেও তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তবে এ দুই বিদ্রোহীকে এবার মনোনয়ন দেওয়ায় মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তাঁরা বলছেন, সাংসদ এনামুল হক প্রভাব খাটিয়ে শুধু তাঁর অনুসারীদের মনোনয়ন এনে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এনামুল হককে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। শুক্রবার দুপুরে এবার মনোনয়নবঞ্চিত ও গতবারের নৌকার প্রার্থী সাফিনুর নাহারের নম্বরে ফোন করা হলে তাঁর স্বামী আবদুল বারী ধরেন। তিনি জানান, সাফিনুর এখন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে বসে বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

রাজশাহী জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বাগমারা উপজেলা পরিষদেরই চেয়ারম্যান। গতবারের দুই বিদ্রোহীকে এবার মনোনয়নের সুপারিশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না। অনিল কুমার সরকারই কথা বলার জন্য বাগমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে ফোনটি দেন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন আ.লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা করে উপজেলা কমিটিতে দিয়েছে। উপজেলা কমিটি সেটা জেলায় দিয়েছে, জেলা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। তালিকায় চার-পাঁচজনের নাম ছিল। কেন্দ্র যাকে পছন্দ করেছে, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ বিষয়ে আর কোন কথা নেই।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by