দেশজুড়ে

শ্রী হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কর্ণফুলী নদী পলিথিন, বর্জ্যে দুই কুল ভরাট

  প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১:০৪:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজীব সেন প্রিন্স, চট্টগ্রাম :

দিন দিন পলিথিনের বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে কর্ণফুলী নদী। খর¯্রােতা নদীটি যেনো পলিথিনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খাল পাড় নদী তীর থেকে প্রতিদিন পানিতে মিশছে বিপুল পলিথিন। কোন ধরনের তদারকি কিংবা নিয়ন্ত্রন না থাকায় নদীর পানিতে পলিথিন মেশানো থামছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, নদীর সব পয়েন্টেই পানির গভীরতা কমছে। তদারকি না থাকায় পলিথিন সহ নানা ধরনের বর্জ্য পড়ছে নদীতে। ড্রেজিং করতে গেলেই পলিথিনের আস্তর বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে নদীর নব্যতা সঙ্কট কাটাতে ড্রেজিং করার কাজও ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নগরীর চাক্তাই এলাকায় খাল থেকে বেশি বর্জ্য পড়ছে নদীতে। ভাটার সময়ে খাল থেকে আসা দূষিত পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশছে। খালের মুখে পানির স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে কালো রূপ ধারণ করে প্রায় সময়। খালের পানির সাথে নদীতে অব্যাহতভাবে আসে পলিথিনসহ নানা আবর্জনা। পরে তা প্রবেশ করে কর্ণফুলীতে।

বর্তমানে নগরীতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। বেশকিছু খাল খনন করা হচ্ছে। চাক্তাই খালের সামনের অংশও খনন করা হয়েছে। কিন্তু খালের উজান থেকে আসা বর্জ্য ও পলিথিনের কারণে খালের মুখ ফের ভরাট হয়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। শুধু চাক্তাই খাল নয়, নগরীর মাঝ বরাবর ও আশপাশে বয়ে বহু খাল মিশে গেছে কর্ণফুলী নদীতে। সেই সব খাল থেকেও সমানে পলিথিন সহ নানা বর্জ্য মিশছে নদীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্ণফুলীকে ঘিরে ১৬ টি শিল্পজোনে ছোট বড় ৮শ’ শিল্প কারখানা রয়েছে। চামড়ার আড়ত, টেক্সটাইল কারখানা, ক্যামিকেল কারখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, সাবান কারখানা, স্টিল মিল, কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) সহ কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন পেপার মিল, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল), ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কারখানা, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), কোমল পানীয় কারখানা, পেইন্ট (রং) কারখানা, সিমেন্ট কারখানাসহ প্রায় ৩শ থেকে ৩৫০ কারখানার বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলীর পানি দূষিত করছে।

এসব কারখানার প্রায় সবই তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ইটিপি) ব্যবহার করে না। বিশেষ করে নদীতে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম), চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল), চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ সিস্টেমের বর্জ্য সবচেয়ে বেশি দূষণের জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর ৭০ হাজার স্যানিটারি পায়খানা, ৪০ হাজার খোলা পায়খানা ও ৬শ’ কসাইখানা, একহাজারের বেশি বস্তির মল প্রতিদিন গিয়ে পড়ছে নদীতে। এতে কর্ণফুলীর দূষণের মাত্রাও বাড়ছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন আবাদি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের ২৫ শতাংশ ৩০টি শাখা খালের মাধ্যমে কর্ণফুলীতে চলে আসে।

সিটি কর্পোরেশনের সলিড ডাম্পিং স্টেশন থেকে বর্জ্যরে নির্যাস বর্ষা মৌসুমে কর্ণফুলী নদীতে চলে আসে। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীতে চলাচলকারী ১ হাজর ২শ’ ছোট লাইটার জাহাজ, শতাধিক অয়েল ট্যাংকার, ইঞ্জিন চালিত সাড়ে ৩ হাজার নৌকার বর্জ্য প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীর পানির সাথে মিশছে। নদীতে চলাচলরত নৌযানের পোড়া তেল এবং দুই তীরের বিশাল এলাকার প্রায় ৬০ লাখ অধিবাসীর গৃহস্থালির বর্জ্যও গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by