বাংলাদেশ

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে সারা দেশে গণঅনশন-বিক্ষোভ

  প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২১ , ৩:৪৩:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

সারা দেশে প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গণ–অনশন, গণ–অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীর শাহবাগে এ কর্মসূচি পালন করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে এবং আয়োজনে সারা দেশে গণ–অনশন, গণ–অবস্থান চলছে।‌ এরই অংশ হিসেবে শাহবাগে চলছে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি।

কর্মসূচি থেকে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা জোরদার, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের দাবি জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী।’

তিনি বলেন, ‘এবারের পূজাতে যে ঘটনা ঘটেছে, এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তা আটকানো উচিত। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশে অসাম্প্রদায়িক প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল দরকার।’

এ কর্মসূচির সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক। গণ–অনশন, গণ–অবস্থানে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আমরা সংক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ব্যবসা করে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, এটি চরম ভাঁওতাবাজি। ভাঁওতাবাজি করে রাষ্ট্র চলতে পারে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা মানা যায় না। এসব ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘এ দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি করা না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সমস্যাটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা, এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।’

গণ-অবস্থানে উপস্থিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘পবিত্র কোরআন অবমাননার জন্য হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়নি; বরং তাদের ওপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই কোরআন শরিফ মন্দিরে রেখে আসা হয়। এবারের এ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না, প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে।’

মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা চলছে, তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না। যারা কোনোদিন রাস্তায় নামেননি, তারা ন্যায়বিচারের দাবিতে সেই কাকডাকা ভোরে থেকে সড়কে প্রতিবাদ করছেন। আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে চাই না।’

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের নেতা–কর্মীরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by