আন্তর্জাতিক

সালমানের সমালোচক প্রিন্সেস বাসমাহ জীবিত না মৃত, প্রমাণ চায় পরিবার (ভিডিও)

  প্রতিনিধি ৭ জুলাই ২০২১ , ৭:২৫:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ বিনতে সৌদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ দেশটির কারগারে জীবিত আছেন নাকি তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে সেটি জানতে চায় পরিবার।  কারাবন্দি বাসমাহ ও তার মেয়ের অবস্থা জানাতে সৌদি সরকারকে চাপ দিতে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে সোমবার আনুষ্ঠানিক আবেদন করে বাসমাহর পরিবার দাবি করেছে, মা-মেয়ে বেঁচে আছেন সেটি সৌদি সরকারকে প্রমাণ করতে হবে।  যদি বাসমাহ ও তার মেয়ে বেঁচে থাকেন তাহলে তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে পরিবার।

মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ ও তার মেয়ে সেৌদ আল শারিফ গত বছরের ১৯ মার্চ থেকে নিখোঁজ।  তাদেরকে জেদ্দার বাসা থেকে আটক করে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।  গত এপ্রিল মাসে বাসমাহ দাবি করেছেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি এক টুইটে তিনি এ কথা জানিয়ে তার মুক্তির জন্য আবেদন জানান। তবে সৌদি সরকার এখনও তাদের আটকে রাখার অভিযোগ স্বীকার করেনি।

জাতিসংঘের কাছে বাসমাহর পরিবারের করা আবেদনে বলা হয়েছে, বাসমাহ ও সৌদকে জোর করে আটকে রাখার বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।  তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  নির্যাতনের পর তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটিও জানে না পরিবার। এমতবস্থায় এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছে পরিবার।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক ছিলেন বাসমাহ।  যুবরাজের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাকে ও তার মেয়েকে আটক করা হয়।

প্রিন্সেস বাসমাহ প্রয়াত বাদশাহ সৌদের ১০৮ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং বর্তমান বাদশাহ সালমানের ভাতিজি। সেই সূত্রে তিনি ও আলোচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান চাচাত ভাই–বোন। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তিদের একজন।

গত এপ্রিলে প্রিন্সেস বাসমাহ এক টুইটে দাবি করেন, তিনি বন্দি অবস্থায় কারাগারে আছেন। তিনি বাদশাহ ও যুবরাজের কাছে তাকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়া তাকে ও তার মেয়েকে রিয়াদে আটকে রাখা হয়েছে। বারবার আবেদন জানানোর পরও কেন তাকে বন্দি রাখা হয়েছে, এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি রাজকীয় আদালত, বাদশাহ সালমান কিংবা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এই প্রিন্সেসের দাবি, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তারপরও তাকে আল হাইর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন খুবই খারাপ।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রিন্সেস বাসমাহ তার মেয়েকে নিয়ে গত বছরের মার্চে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে সৌদি আরব ছাড়ার সময় তাদের আটক করা হয়। জরুরি চিকিৎসার কথা বলে ব্যক্তিগত জেটে করে যেতে চাইলে তাকে দেশ ছাড়তে দেওয়া হয়নি।

প্রিন্সেস বাসমাহ সৌদি আরবের বর্তমান ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সবসময়ই সোচ্চার। নারী অধিকার ও মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার এই প্রিন্সেস খুবই অল্প সময় গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। তিনি কয়েক বছর লন্ডনে ছিলেন। পরে তিনি ব্যবসায় মন দেন। প্রিন্সেস বাসমাহ ২০১৫ সালের শেষের দিকে সৌদি আরবে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি ইয়েমেন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসী ভূমিকার কড়া সমালোচক। সৌদি আরবে ব্যাপক সংস্কারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, প্রিন্সেস বাসমাহের কারাবন্দীত্বের পেছনে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত আছে। কারণ, এই বিষয়ে তিনি চুপ আছেন।  হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক রোথনা বেগম বলেন, সৌদি আরবে অনেক নারীকে যে নিভৃতে বন্দি রাখা হয়েছে, এটা তার প্রমাণ। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জামানায় কারো যে কথা বলার অধিকার নেই, তা স্পষ্ট।

এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বাসমাহ, ভিডিও

আরও খবর

Sponsered content

Powered by